একুশে ফেব্রুয়ারি যেভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হলো

একুশে ফেব্রুয়ারি যেভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হলো

পিডিএফ ডাউনলোড

২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস

বাংলা ভাষাভাষী লোকদের নিকটে সুপরিচিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বা শহীদ দিবস হিসেবে পরিচিত দিনটি হলো ”২১ শে ফেব্রুয়ারি।” আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস দিনটি মর্যাদার দিন হিসেবে মনে করেন পশ্চিমবঙ্গে এবং বাংলাদেশে অর্থাৎ বাঙালীর কাছে এবং বাংলাভাষী জনগণের কাছে। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনের উপর পুলিশের গুলিতে শহীদ হওয়া তরুণদের লক্ষ্য করেই এই দিনকে শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনে সালাম, রফিক, জব্বার এবং বরকতসহ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ শহীদ হন।

অর্থগত দিকথেকে মাতৃভাষা হলো মায়ের ভাষা। বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন ভাষায় কথা বলে, আর সে অঞ্চলগুলোর ভাষা তাদের মাতৃভাষা হিসেবে পরিচিত। মাতৃভাষা বলতে যা বুঝায় তা হলো একটি বৃহত্তর অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর ভাষা। যা তারা স্বাধীনভাবে ব্যবহার করতে পারে।

২১ শে ফেব্রুয়ারি বা ভাষা আন্দোলনের প্রারম্ভিকতা

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহের দ্বিজাতিতত্ত্বের নীতিতে ভারত এবং পাকিস্তান ভাগ হয়ে পড়ে, আর পাকিস্তান ভাগ হয়ে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে চলতে শুরু করলেই ভাষা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। মূলত ভাষা নিয়ে সমস্যা ভারত পাকিস্তান ভাগের আগে থেকেই ছিলো আর পরবর্তীতে পাকিস্তান ভাগ হলে তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। আর এ নিয়ে মিল্লাত নামক পত্রিকায় প্রকাশিত কলামের সারসংক্ষেপ হলো এই যে, নিজের মুখের ভাষা অর্থাৎ নিজের প্রাণ বাদ দিয়ে অন্য একটা ভাষাকে গ্রহণ করা দাসত্বের সমানই। আর দৈনিক আজাদি নামক প্রসিদ্ধ পত্রিকায় বলা হয়েছে যে, বাংলা ভাষাকে পরিবর্তন করে উর্দুকে প্রতিস্থাপন করলে বাংলাভাষী জনগণ সকল উচ্চপদস্থ অবস্থান থেকে নেমে যাবে আর সে সুযোগ কে উর্দুভাষীরা কাজে লাগিয়ে দেশের সকল উচ্চপদে আসীন হবে।

এতে করে বাঙ্গালীরা পিছনে পড়ে যাবে। উর্দুভাষীরা এগিয়ে থাকবে শিক্ষা বিভাগসহ সবদিক দিয়েই। এছাড়াও আরো চিন্তা ছিলো বাংলাভাষীদের মনে, দুই পাকিস্তান তথা পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যখানের দূরত্বই ছিলো দুই হাজার কিলোমিটার, আর এই দুই হাজার কিলোমিটার দূরত্বের দুই স্থানের অধিবাসীর মন মানুষিকতা, সংস্কৃতিসহ চিন্তাভাবনার ফারাক ছিলো বিশাল। কেবলমাত্র ধর্মের মিল নিয়ে কতটা ভালো থাকবে সে নিয়ে চিন্তার অন্ত নাই। তাছাড়াও পাকিস্তানের পরিবর্তনগুলোর মধ্যে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো মুদ্রা, ট্রেনের টিকেট, পোস্টকার্ড এবং ডাকটিকেটসহ সরকারি অনেক পদেই ইংরেজি এবং উর্দুর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়, বাংলা অগোচরে থেকে যায়।

পাকিস্তানি শাসনামলে পূর্ব পাকিস্তানের মুখের ভাষা নিয়ে যে চেতনা প্রকাশিত হয় তার কারণেই অর্থাৎ বাঙালীদের মাতৃভাষা প্রয়োগের দাবিতে ১৯৪৭ সালের শেষের দিকে ঢাকায় ছাত্র এবং বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে ভাষা বিক্ষোভের শুরু হয় । কারো কারো মতে এরপরের বছরই সে বিক্ষোভ সীমিত আকারে চলে যায়। কিন্তু বাস্তবে আসলে তার বিপরীতধর্মী দিক দেখা যায়।

১৯৪৮ সালের দিকে পাকিস্তানের মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ রেসকোর্স ময়দানের একটি সমাবেশে বলেন যে, ” উর্দু এবং উর্দুই হবে পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা”। আর ঠিক তখনই বাঙ্গালীরা প্রতিবাদ শুরু করে। জিন্নাহ উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার ব্যাপারে ছিলো একরোখা। আর এখান থেকেই বাঙ্গালীর আশা স্বপ্ন বিলুপ্ত হতে থাকে দেশভাগের পর। কারণ এই সমাবেশই ছিলো শুরু রাষ্ট্রভাষার সাথে বাঙ্গালীর শান্তি, অধিকার সব ছিনিয়ে নেবার। আরো হাস্যকর বিষয় ছিলো এমন যে, উর্দুভাষীরা বাংলাভাষীদেরকে হিন্দু বা হিন্দুয়ানী ভাবতো অর্থাৎ বাংলাকে হিন্দুয়ানী ভাষা হিসেবে জানতো।

ভয়ানক অগ্নি স্ফুলিঙ্গ এর সৃষ্টি

কায়দে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মৃত্যু বরণ করার ও পরেও রাষ্ট্র ভাষা নিয়ে নানা মত নানা প্রস্তাবের আলোচনা দেখা যায়। আর সেজন্য থেমে থেমে আন্দোলন ও চলছিলো। আর শেষে এটি ভয়ানক অগ্নি স্ফুলিঙ্গ হিসেবে দেখা দেয় ২৬ই জানুয়ারিতে। কারণ ওইদিন পাকিস্তানের অ্যাসেম্বলিতে উর্দুকেই রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা দেয় চূড়ান্তভাবে।

২১ শে ফেব্রুয়ারি

১৯৫২ সালে ভাষা নিয়ে সমস্যা আরো তীব্র আকার ধারণ করে। পাকিস্তানে উর্দুভাষী ছিলো সংখ্যাগরিষ্ঠ। বাঙ্গালীরা আরো বেশি শঙ্কিত হয়ে পড়ে যখন দেখে খাজা নাজিমুদ্দিন ও বাঙ্গালীর বিরুদ্ধে অবস্থান করছে। মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহর কথাগুলোই খাজা নাজিমুদ্দিন বলতেছিলো। আর তাই খাজা নাজিমুদ্দিন এর দেওয়া বক্তব্যের বা ঘোষণার পরোয়া না করে বাঙ্গালী ধর্মঘট এবং মিটিং মিছিল শুরু করে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে। আর এই হাতিয়ারটি ভালোভাবে কাজে লাগানো জনগণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীবৃন্দ।

ভাসানী বাঙ্গালীর এই দুঃসময়ের সাথী সঙ্গী হিসেবে বাঙ্গালীর তথা পূর্ব-পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিরাট ভূমিকা পালন করেন, আর তাকে পূর্ণভাবে সমর্থন করেন রাজনৈতিক, সংস্কৃতিকর্মী এবং সর্ব স্তরের মানুষজন। একুশে ফেব্রুয়ারিকে ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়। আর এই ধর্মঘট প্রতিহত করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ তার চারপাশের এলাকার মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। আর এটি অমান্য করাতেই আজকের এই শহীদ দিবসের সৃষ্টি হয়। এই হত্যাকাণ্ড এর প্রতিবাদে অধিবাসীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে উপস্থিত হন। নানা অত্যাচার নিপীড়নের পর ও তারা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।

পরে ২২ফেব্রুয়ারিতে জনগণ আবার রাজপথে নামেন আর মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের মাঠে শহীদদের জন্য গায়েবি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আর তাদের এই ত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের মাঠে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয় ২৩ ফেব্রুয়ারি। যেটি সরকার কর্তৃক ২৬ ফেব্রুয়ারি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এইদিনে কত জন মানুষ শহীদ হয় তার নির্দিষ্ট সংখ্যা সম্পর্কে মানুষ অজ্ঞাতই ছিলো। তবে ২১ শে ফেব্রুয়ারি এবং তার পরদিনে অনেক শহীদ হন। যদিও পত্রপত্রিকা এবং ইতিহাসের পাতায় সালাম, রফিক ও বরকতসহ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের নাম আসে।

বাংলাদেশ রাষ্ট্র

দুই হাজার কিলোমিটার দূরত্বের ভূখণ্ডের জনগণের মাঝে প্রার্থক্য বিরাজমান। দুই ভিন্ন ভাষার জাতী স্বভাবে, চলনে, আচরণে, সংস্কৃতিতেও ভিন্ন ছিলো। শুধুমাত্র ধর্মের যোগসূত্রের কারণে এরা এক থাকতে পারবে এটা মানলেও পরবর্তীতে তার ভিন্ন রূপ দেখা যায়। ভাষা কে কেন্দ্র করে যে আন্দোলন গড়ে উঠে সেটিই হলো বাংলাদেশের বীজ বপন। ভাষা আন্দোলনের হত্যাকাণ্ড আন্দোলন কে থামাতে পারেনি। ভাষার জন্য, নিজের পরিচয়ের জন্য বাঙ্গালীরা লড়াই করে গেছে।

এত হত্যাকাণ্ড ঝামেলার পর ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সংসদ বাঙ্গালী তথা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মাতৃভাষা মুখের ভাষা কে পাকিস্তানের আরেকটি রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকার করে স্বীকৃতি প্রদান করে। এই আন্দোলন বা রাষ্ট্র ভাষার স্বীকৃতিই বাংলাদেশের বীজ বপন হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। জাতীয় সংসদে বাংলাভাষা প্রচলন বিল পাশ হয় ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭ সালে। যেটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে তারপরের মাস থেকেই।

২১ শে ফেব্রুয়ারিকে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত বাংলা

কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে অবস্থিত দুই বাংলাদেশি প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে শহীদ দিবস তথা ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন করে জাতিসংঘের মহাসচিবের নিকটে ১৯৯৮ সালে। তথ্য কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হাসান ফেরদৌস চিঠিটি দেখে বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের মধ্যকার রফিক কে জাতিসংঘের অন্য সদস্য রাষ্ট্রের থেকে প্রস্তাব আনতে অনুরোধ করে। “মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড ” নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশী কিছু উদ্যোক্তারা ।

জার্মানভাষী, ইংরেজভাষী এবং কাচ্চিভাষীসহ কিছু সদস্য যুক্ত হয় এই সংগঠনে। আর তারা মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড গ্রুপ থেকে চিঠি লিখেন। ১৯৯৯ সালের শেষ দিকে অর্থাৎ নভেম্বরে ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাবটি তুলে ধরে হয় এবং ১৮৮ দেশ সমর্থন ও জানায়, এতে করে বাঙ্গালীর একুশে ফেব্রুয়ারি তথা মাতৃভাষা দিবস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়। আর ২০০০ সাল থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সঠিক মর্যাদায় পালিত হয়।

সিয়েরালিয়নের ভাষা

আফ্রিকার যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলের মধ্যে সিয়েরালিয়ন অন্যতম। গৃহযুদ্ধে দেশটি আক্রান্ত ছিলো। জাতিসংঘ দেশটির শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতিনিধি পাঠায়, বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যায় এবং রক্তপাতহীন এক শান্তিময় রাষ্টের উদ্ভাবন করে। আর সেনাবাহিনীর মুখের ভাষার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে, সেনাবাহিনীদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা এবং বাংলাকে দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। যেটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের বিষয় ছিলো।

২১ শে ফেব্রুয়ারি উদযাপন

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের দিনটি মাতৃভাষা দিবস বা ২১ শে ফেব্রুয়ারি হিসেবে পরিচিত। আর এটি প্রতিবছরই জাতীয় ভাষা দিবস হয়ে পালিত হয়ে আসছে এবং জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহে ২০০০ সাল থেকেই পালিত হয়ে আসছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনায় দিবসটি এখনো ঠিকভাবে পালন করা হয়, ২১ শে ফেব্রুয়ারির রাত ১২ টা থেকেই এই দিবস শুরু এবং এটি প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আর শিক্ষকগণ ছাড়াও সর্বস্তরের জনগণ কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে গিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। ভাষা শহীদদের লক্ষ্য করে বিভিন্ন গান চলতে থাকে। বাংলা একাডেমি ফেব্রুয়ারি মাসে একুশে বইমেলার আয়োজন করেন যা বহু বছর ধরে চলমান।

ইউনেস্কো প্রত্যেক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের জন্য থিম বেছে নেয় এবং প্যারিস দফতরের ইভেন্টগুলোতে স্পন্সর করে থাকে। আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বছর শুরু হয় ২০০৮ সালে, যেটি চিলি, রাশিয়া ফিলিপাইন্সহ বিশ্বের বড় বড় দেশে পালিত হয়ে আসছে। ব্রেইল এবং সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ থিম ২০০৫ সালে হয়। ভাষা এবং সাইবারস্পেস বার্ষিক থিম ২০০৬ সালে। বহুভাষিক শিক্ষা থিম ২০০৭ সালে, ভাষার আন্তর্জাতিক বছর শুরু হয় ২০০৮ থেকে, মাতৃভাষা শিক্ষার জন্য বই ২০১৩ থেকে।

যুক্তরাষ্ট্রে উদযাপনঃ- ২০১৭ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে মাতৃভাষা ফিল্ম ফেস্টিভাল অনুষ্ঠিত হয় ২১ শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে।

যুক্তরাজ্যেঃ- ঢাকার শহীদ মিনারের প্রতিরূপ স্বরূপ লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে নির্মিত হয় ১৯৯৯ সালে। যেটিতে সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গ গণ পুষ্পস্তবক প্রদান করেন এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা উপলক্ষ্যে নানা গান গাওয়া হয় এবং শোনা হয়। সৌধে এই দিবস কে লক্ষ্য করে উত্তর ইংল্যান্ডের সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা আসেন।

২১ শে ফেব্রুয়ারির দাপ্তরিক নাম        : আইএমএলডি তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

দিবসটি পালন করা হয়।            : বিশ্বব্যাপী।

দিবসটির তাৎপর্য                  : সকল ভাষার সংরক্ষণ এবং সুরক্ষার প্রচারার্থে।

তারিখ                         : ২১ শে ফেব্রুয়ারি

ফ্রিকোয়েন্সি                      : বার্ষিক।

পরবর্তী আয়োজন                  : ২১ শে ফেব্রুয়ারি ২০২২।

বাংলা ভাষা আন্দোলন               : ১৯৫২ সাল।

প্রথম ভাষা আন্দোলন দিবস পালিত হয়  : ১৯৫৫ সালে।

ইউনেস্কো দিবসটি ঘোষণা করে        : ১৯৯৯ সালে।

ভাষা আন্দোলনের উদ্বোধনী উদযাপন     : ২০০০ সালে।

লিঙ্গুয়াপ্যাক্স পুরস্কারঃ-

এই পুরস্কারের মধ্যে বার্সেলোনা আইএমএলডির উপর বার্ষিক পুরস্কার প্রদান করে। এই পুরস্কার ভাষার সংরক্ষণ, সুরক্ষা, ভাষার পুনরুজ্জীবন এবং বহুভাষিকতার কৃতিত্বে স্বীকৃতি দান করে।

একুশে যুব পুরস্কারঃ-

আলবার্টা বাসিন্দাদেরকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। আলবার্টার মাহিনুর জাহিদ এমজেএমএফ কর্তৃক প্রবর্তিত আইএমএলডি-তে ঘোষিত সকল ধরণের পুরস্কার তথা যুব ক্রিয়াকলাপ, একুশে যুব পুরস্কার, শিক্ষা, খেলাধুলা এবং সাহিত্যসহ বিভিন্ন কিছুর উপর অনুপ্রাণিত করে তরুণদেরকে পুরস্কৃত করে।

একুশে হেরিটেজ পুরস্কারঃ-

বিএইচইএসএ তথা বাংলাদেশ হেরিটেজ অ্যান্ড এথনিক সোসাইটি অফ আলবার্টা কর্তৃক প্রবর্তিত একুশে হেরিটেজ অ্যাওয়ার্ড, সামাজিক কার্যাদি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ অর্জনের জন্য স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং পুরস্কার প্রদান করা হয়।

স্মৃতি সংগ্রহ এবং সংরক্ষণঃ-

একটি দেশের সংস্কৃতির ধারক বাহক হিসেবে ভাষা উল্লেখযোগ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুতে সংরক্ষিত আছে কিছু স্মৃতি, যেগুলো ভাষা শহীদদের ত্যাগের স্মৃতিকে জাগিয়ে তোলে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরেও উল্লেখযোগ্য অনেক স্মৃতি রয়েছে।

ভাষা ও সাহিত্যঃ-

সাহিত্যের উৎকর্ষতার মূল হাতিয়ার ছিলো ভাষা আন্দোলন। আন্দোলনে ভাষা সাহিত্য অনুপ্রেরণা দিয়েছিলো আন্দোলনকারীদের। একুশ কে কেন্দ্র করে রচিত গল্প কবিতা তথা সাহিত্যগুলোই তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। কবিতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি। আর কবিতাই ছিলো তৎকালিন সময়ের অনুপ্রেরণার প্রতীক।

একুশ এর শিক্ষাঃ-

উৎসব, উদযাপনের মধ্যেই একুশ সীমাবদ্ধ নয়। এটির প্রভাব বিস্তারের স্থান বিশাল। একুশ শিক্ষা দিয়ে যায়, যা সঠিক ভাবে গ্রহণ করা বাঙ্গালীর জন্য অবধারিত। এটি সত্যিকারের বাংলার ইতিহাস ধরে রাখতে সক্ষম।

ভাষার গুরুত্বঃ-

প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ভাষার ব্যাপারে চমৎকার বিবৃতি প্রকাশ করেন। মা, মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষা শ্রদ্ধার বিষয়। মাতৃভাষার মাধ্যমেই মুখ দিয়ে কিছু ব্যক্ত করা যায়। মনের ভাষা প্রকাশ করা যায়। সাহিত্যের ব্যাপারেও এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রামনিধি গুপ্তের মতে – নানান দেশের নানান ভাষা

বিনা স্বদেশি ভাষা;

পুরে কি আশা।

সমাপিকাঃ-

জাতীয় শান্তি এবং মুক্তির হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত হলো ২১ শে ফেব্রুয়ারি। এই ভাষা দিবস বাঙ্গালীকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়, বুঝতে শেখায় প্রাণ পাওয়ার মত নতুন জীবন দান করে। আর এই একুশের আনন্দ দেশ ছেড়ে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়েছে। আর তাই মাতৃভাষা বাংলার শক্তি হিসেবে জ্ঞানে বিজ্ঞানে, শিক্ষায় এবং সংস্কৃতি তে নিজেদেরকে পূর্ণ করে নতুনভাবে বাঁচতে হবে। একুশ আমাদের শান্তি মুক্তির হাতিয়ার আর তাই পর্যাপ্ত জ্ঞান দ্বারা প্রতিটা মানুষকে জ্ঞান দ্বারা পূর্ণ করতে হবে। ২১ শে ফেব্রুয়ারি বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে একে সজিব এবং চির-চলমান রাখতে হবে।

আরে পড়ুনঃ-

Download From Google Drive

Download

Download From Yandex

Download

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here