বাংলাদেশের সকল বিখ্যাত স্থান সর্ম্পকিত গুরত্বর্পূণ নোট পিডিএফ ডাউনলোড

বাংলাদেশের সকল বিখ্যাত স্থান সর্ম্পকিত গুরত্বর্পূণ

নোট পিডিএফ ডাউনলোড

মহাস্থান গড়ঃ- বাংলাদেশের বর্তমান বগুড়া শহর থেকে ১১ কিঃ মিঃ (৮ মাইল) উত্তরে মহাস্থান গড় অবস্থিত। এর পূর্ব দিক দিয়ে করতোয়া নদী প্রবাহিত। এর দৈর্ঘ্য ৫০০০ ফুট এবং প্রস্থ ৪৫০০ ফুট। চারপাশের সমতল ভূমি থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট। এখানে খ্রীঃ পূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে খ্রীঃ ১২ শতক পর্যন্ত মৌয, গুপ্ত, পাল ছাড়া আরও কয়েকটি হিন্দু সামন্ত রাজ বংশের রাজধানী ছিল। এখানেই ছিল বিখ্যাত পুন্ড্রনগর। আর্যদের আগমনের পূর্বে পুন্ড্র অধিবাসীরা বাস করতো। কারো কারো মতে মহাস্থান থেকে মহাস্থান গড় নামটির উৎপত্তি। আবার কেউ কেউ বলেন এর নাম মহাস্থান গড়। একটি কিংবদন্তি অনুযায়ী স্থানীয় ক্ষত্রিয় নরপতি পরশুরামকে পরাজিত করে শাহ্ সুলতান বলখী মাহীসওয়ার নামে এক আওলিয়া সেখানে ইসলামের বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন। এই আওলিয়ার মাজার মহাস্থানের দক্ষিণ পূর্ব কোনে অবস্থিত মহাস্থানের প্রধান প্রধান ধ্বংসাবশেষের মধ্যে বৈরাগীর ভিটা, গোবিন্দ ভিটা, খোদার পাথর ভিটা, পরশুরামের প্রসাদ ও সভাবাট্টি, শীলা দেবীর ঘাট ও লক্ষীন্দরের মেধ অন্যতম।

পরশুরামের প্রসাদ ও সভাবাটীঃ- এই প্রাচীন প্রসাদের আয়তন ২০০ ফুট বাই ১০০ ফুট। এটি হচ্ছে মহাস্থানের সর্বশেষ হিন্দু নৃপতি পরশুরামের রাজপ্রসাদের ধ্বংসাবশেষ। খোদার পাথর ভিটা থেকে যে বিস্তৃত রাস্তাটি মথুরা গ্রাম ও বসুবিহার পর্যন্ত প্রসারিত, তারই পাশে অবস্থিত পরশুরামের সভাবাটী। পরশুরাম এখানেই তার রাজ সভার কার্য পরিচালনা করতেন।

ময়নামতিঃ- লালমই ময়নামতির চিত্রোপম নয়নাভিরাম ছোট ছোট পাহাড় শ্রেণী উত্তর দক্ষিণে প্রায় ১১ মাইল বিস্তৃত এবং কুমিল্লা জেলার প্রায় কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। ধারণা করা হয় রাজা মানিকচন্দ্রের স্ত্রী রানী ময়নামতির নামানুসারে এ স্থানের নামকরন করা হয়েছে। ১৯৫৫ সালে এখানে খনন কার্য শুরু করা হয় এবং পাহাড় অঞ্চলে খনন কার্যের জন্য প্রতœতত্ব বিভাগ চারটি স্থান নির্ধারন করেন। উল্লিখিত চারটি স্থান হল শালবন বিহারের একটি বিরাট বৌদ্ধ প্রতিষ্ঠান, কোটিলা মুড়ার তিনটি স্তুপের পাশাপাশি সমাবেশ, চারপত্র মুড়ার একটি ছোট বৌদ্ধ মন্দির ও রানী ময়নামতির প্রসাদ ও মন্দিরের প্রাচীর বেষ্টিত প্রতœাবশেষ। শেষোক্ত প্রতœবশেষের প্রকৃত রূপ এখনো জানা যায়নি। তবে শালবন বিহারের ধ্বংসাবশেষ ছাড়া বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মের বহু নিদর্শণ এখানে পাওয়া গেছে। এগুলো সংরক্ষনের জন্য এখানে একটি প্রতœতাত্বিক যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়।

শাল বন বিহারঃ-৭ম শতকের শেষার্ধে রাজা আনন্দ দেবের পুত্র ভবদেব এটি নির্মাণ করেন। লালমই ও ময়নামতি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে বর্গাকারে বিহারটি অবস্থিত। এর প্রতি বাহু ৫৫০ ফুট। ১১৫ টি কামরা বিশিষ্ট বিহারটির দেওয়ালের পুরুত্ব ১৭ ফুট। বিহারের মন্দিরের মধ্যবর্তী দেওয়াল থেকে পাওয়া গেছে পোড়ামাটির ফলক।

লক্ষীন্দরের মেধঃ- বাংলাদেশের অন্যতম চিত্তাকর্ষক লোক কাহিনীর নায়ক নায়িকা বেহুলা লক্ষীন্দরের একটি ধ্বংসাবশেষ থেকে এরুপ নাম করন করা হয়েছে। মূল মহাস্থান গড় থেকে ১ মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে এবং গোকুল গ্রামের পশ্চিমে প্রায় ৪৩ ফুট উচু এক ঢিবির উপরই মেধ মন্দিরটি অবস্থিত। এটা বৌদ্ধদের কেন্দ্রীয় উপাসনালয় ছিল।

জগদল বিহারঃ- নওগা জেলার ধামরাইর হাট থানার জগদল গ্রামে এ বিহারটি অবস্থিত। প্রত্মতত্ত¡ বিভাগ খনন কার্যের মাধমে প্রায় এক হাজার বছর পূর্বের ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি জগদল বিহারের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পান। ৭ ডিসেম্বর প্রতœতত্ত¡ খনন কার্য শুরু হয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল রাজাদেরু শাসনামলে ৭৫০ -১৩৩৩ খ্রীঃ সোমপুর বিহারসহ জগদল বিহার নির্মান করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আনন্দ বিহারঃ- কুমিল্ল শহর থেকে ৫ মাইল পশ্চিমে ময়নামতিতে এ বিহার অবস্থিত। ময়নামতিতে যে সব ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে আনন্দ বিহারই সর্ববৃহৎ। ৭ম শতকে দেব বংশীয় প্রভাবশালী রাজা আনন্দ দেব শালবন বিহারের দুই মাইল উত্তরে এই আনন্দ বিহার নির্মান করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এখানে বৃটিশ সৈন্যরা অবস্থান করেছিল। ৮০ এর দশকে এর খনন কার্যসম্পন্ন হয়। এখানে বৌদ্ধ সভ্যতার বহু নিদর্শণ এবং আব্বাসীয় যুগের কয়েকটি মুদ্রা পাওয়া যায়।

সোমপুর বিহারঃ- উপমহাদেশের বিখ্যাত বৌদ্ধ বিহারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সোমপুর বৌদ্ধ বিহার। নওগা জেলার পাহাড়পুরে অবস্থিত সোমপুর বিহারই আয়তনে সবচেয়ে বড়। পাল বংশের রাজা ধর্মপালের সময়কালে (৮ম শতক) এটি নির্মিত হয়। বিহারটি উত্তর দক্ষিনে প্রায় ৯২২ ফুট এবং পূর্ব পশ্চিমে ৯১৯ ফুট। বিহারের চারদিকে ১১৭ টি আবাশিক কক্ষ রয়েছে। এর প্রবেশ পথ ছোট ছোট স্তুপ ও মন্দির দিয়ে পরিবেষ্টিত। উচুঁ ঢিবিতে অবস্থিত সোমপুর বিহার মন্দিরটির দৈর্ঘ্যে উত্তর দক্ষিনে ৩৫৬ ফুট ৩ ইঞ্চি। ১৯২৩ সালে এখানে খনন কার্য শুরু হয়। এখানে বহু হিন্দু ও বৌদ্ধ সভ্যতার নিদর্শণ পাওয়া গেছে।

বৈরাগীর ভিটাঃ- বগুড়া জেলার মহাস্থান গড়ে অবস্থিত। এখানে খ্রীষ্টীয় ৮ শতকে ও ১১ শতকে তৈরি দুটি বৌদ্ধ মন্দির পাওয়া গেছে। এছাড়া পালদের সময়কালের বহু কীর্তির চিহ্ন এবং গুপ্তযুগে নির্মিত মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।

খোদার পাথর ভিটাঃ- মহাস্থান গড়ের দরগা থেকে প্রায় ২০ গজ উত্তর পশ্চিমে এই ঢিবিটি অবস্থিত। এখানে সাড়ে নয় ফুট লম্বা ও প্রায় আড়াই ফুট চরড়া ও আড়াই ফুট উচুঁ ১০০ মন ওজনের একটি পাথর আছে। এ পাথরকে খোদার পাথর বলে। স্থানীয় হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ একে পবিত্র বলে মানে।

গোবিন্দ ভিটাঃ- ১৯২৮-১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দে খননকৃত অন্যান্য ধ্বংসাবশেষের মধ্যে গোবিন্দ মন্দিরটি সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় ও উল্লেখযোগ্য। আঁকা বাঁকা করতোয়া নদীর বেষ্টনীতে অবস্থিত ভগ্নাবশেষটি মহাস্থান দূর্গ প্রাচীরের বর্হিদেশে উত্তর দিকে অবস্থিত। খ্রীষ্টীয় ১২শ -১৩শ শতাব্দে লিখিত সংস্কৃত গ্রন্থ করতোয়া মাহাত্ম্যে মন্দির পবিত্র নগরীর শেষ উত্তর সীমা বলে বর্নিত হয়েছে।

কীলা দেবীর ঘাটঃ- এ স্থানটি মহাসথান গড় থেকে ২০০ গজ পুর্বে বৈরাগীর ভিটার বিপরীতে অবস্থিত। কিংবদন্তি অনুসারে রাজা পরশুরামের এক পরম সুন্দরী কন্যা (কারও মতে বোন) ছিলেন শীলা দেবী। যখন মুসলগণ সুলতান বলকী মাহীস ওয়ারের নেতৃত্বে রাজা পরশুরামকে পরাজিত ও নিহত করে দূর্গ দখল করেন, তখন শীলা দেবীও অন্যান্যদের মতো মুসলমান বীরের হাতে বন্দী হন। কিন্তু শীলা দেবী আপন মর্যাদা রক্ষার্থে বিজয়ী মুসলমান দরবেশকে ছুরিকাঘাতে নিহত করে নিজে করতোয়া নদীতে আত্মবিসর্জন করেন। আর শীলা দেবী নদীর যে স্থানটি ঝাপ দেন সেটিই শীলা দেবীর ঘাট নামে পরিচিত।

সত্য পীর ভিটাঃ- পাহাড়পুর বিহারের পূর্ব প্রাচীর থেকে প্রায় চারশত গজ পূর্বে এই মন্দির অবস্থিত। সত্যপীর ভিটা নামের উদ্ভব মাত্র ১৭শ -২৮শ শতাব্দিতে। কারণ এই সময়ে জনসাধারণ ইসলাম ধর্ম গ্রহল করে । এবং নিজেদের ধর্ম মাহাত্ম প্রচার করার জন্য মাটি ঢাকা এই ঢিবিতে পীর দরবেশদের নিয়ে কাল্পনিক কাহিনী আরোপ করে। তবে খনন কার্য থেকে জানা যায় অতীতে এটি একটি প্রসিদ্ধ তাঁর মন্দির ছিল।

কান্তাজীর মন্দিওঃ- দিনাজপুর থেকে ১৭ কিঃ মিঃ উত্তরে অবস্থিত এই মন্দিরটি সম্রাট আকবরের সময় রাজা প্রাণনাথ নির্মান করেন। মন্দিরের প্রাপ্ত ফলক থেকে জানা যায়, ১৭০৪ সালে রাজা প্রাণনাথ মন্দিরের কাজ শুরু করেন। তখন এর নাম ছিল নবরতœ খাঁ। এতে ছিল ৯টি গম্ভুজ । ১৭৫২ সালে তার পুত্র এর নির্মান কাজ শেষ করেন। ২৬ কিঃ মিঃ এলাকা জুড়ে মন্দির চত্ত¡রটি অবস্থিত। মন্দিরের দেওয়ালে রামায়ন ও মহাভারতের কাহিনী পোড়ামাটির ফলকে চিত্রায়িত রয়েছে।

পাহাড়পুরঃ- পাহাড়পুর রাজশাহী বিভগে নওগা জেলায় অবাস্থত। এর প্রাচীন নাম সোমপুর। এটি পাল রাজাদের একটি প্রত্মতাত্মিক নির্দশণ। ১৯২৩ খ্রীঃ এর খনন কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশের বৌদ্ধ যুগের সবচেয়ে বড় নির্দশণ এটি।

সোনার গাঁঃ- বার ভূইয়াদের অন্যতম ঈসা খাঁর আমলের রাজধানী ছিল সোনার গাঁ। ঈসা খাঁর স্ত্রীর নাম অনুসাওে এর নামকরণ করা হয়। সোনার গাঁর অপর একটি নাম সুবর্ন গ্রাম। ঢাকা – চট্টগ্রাম  মহাসড়ক ধরে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে প্রায় ২৬ কিঃ মিঃ গেলে মোগড়া গ্রাম। এখান থেকে কিছুটা পূর্বদিকে ছায়া ঢাকা অঞ্চল প্রাচীন সোনার গাঁ। এখানে পঞ্চম পীরের মাজার, গিয়াস উদ্দিন আজম সাহেবের কবর ও হোসেন শাহ নির্মিত সুদৃশ্য মসজিদ আছে। শের শাহ সোনার গাঁ থেকে সিন্ধু পর্যন্ত মহাসড়ক নির্মাণ করেন। এটিই গ্রান্ড ট্রাংক নামে খ্যাত। এখানে লোক শিল্প যাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে। ঈসা খাঁর স্মৃতি বিজড়িত সোনার গাঁ এক সময় বাংলার স্বাধীন সুলতানদের রাজধানী ছিল।

আহসান মঞ্জিলঃ- পুরাতন ঢাক ও বুড়িগঙ্গার নদীর তীরে ইসলামপুরে অবস্থিত। ১৮৭২ সালে ঢাকার নবাব আব্দুল গনি তাঁর পুত্র খাজা আহসান উল্লার নামে আহসান মঞ্জিল তৈরি করেন। ১৮৮৮ সালে এক তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আহসন মঞ্জিল যাদুঘর উদ্ভোদন করেন। বর্তমানে এর রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে।

লাল বাগ কেল্লাঃ- পূর্বনাম আওরঙ্গবাদ দুর্গ। ১৬৭৮ সালে লালবাগে আওরঙ্গজেবের পুত্র শাহজাদা আজম এর নির্মান কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে শায়েস্তা খাঁ এর নির্মান কাজ শেষ করেন। পূর্ব পশ্চিমে ২০০০ ফুট লম্বা ও উত্তর দক্ষিনে ৮০০ ফুট চরড়া। এর উত্তর দক্ষিনে দেওয়ালে দুটি তোরন রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিন তোরনের মাঝে রয়েছে বর্গাকার বাধানের পাকুর। কেল্লা চত্বরে রয়েছে তিনটি পুরাকীর্তি। এ গুলো হল পরী  বিবির মাজার, দরবার হল এবং তিন গম্ভুজ বিশিষ্ট মসজিদ।

বড় কাটরাঃ- সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র শাহাজাদা মুহাম্মদ সুজা বাংলার সুবেদার নিযুক্ত হবার পর তিনি বাংলার সাময়িকভাবে পান্ডুয়ার নিকটবর্তী স্থনে স্থানান্তর করেন। শাহাজাদা সুজা তাঁর পরিবার পরিজনের জন্য বুড়ি গঙ্গার তীরে চক বাজােেও একটি বাড়ী নির্মানের আদেশ দেন। তাঁর আদেশে নির্মান প্রকৌশলী আবুল কাসেম ১৬৬৪ সালে বড় কাটরা নির্মান করেন। এই সুবিশাল অট্টালিকার উত্তর দক্ষিন বাহুর দৈর্ঘ্য ছিল ২৩০ ফুট। শুধু প্রবেশ পথের উপরের অংশই ছিল তিন তলা বিশিষ্ট, কাটরার বাকী অংশ দ্বিতল। শহজাদা সুজার এ প্রাসাদ পছন্দ না হওয়ার কারনে প্রকৌশলী আবুল কাশেম কে তা দান করে দেন।

ছোট কাটরাঃ- বড়কাটরা থেকে দুশত গজ পূর্ব দিকে বুড়ীগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ছোট কাটরা অবস্থিত। সুবেদার শায়েস্তা খাঁন নিজ বসবাস ও সুবেদারী কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ১৬৬৩-১৬৬৪ সালে ছোট কাটরা নির্মান করেন। শায়েস্তা খানের এদেশীয় স্ত্রী চম্পা বিবি ও তার সন্তানাদি নিয়ে এখানে তিনি দীর্ঘ দিন বসবাস করেছেন। ১৮১৬ সালে এটিকে স্কুলে পরিনত করা হয়। পরবর্তীতে নবাব পরিবারের দখলে চলে যায় এটি। নবাবরা এটিকে ব্যবসা কেন্দ্রে পরিনত করে। বর্তমানে অব্যবস্থার কারনে এটি প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে।

বাহাদুর শাহ পার্কঃ- আঠার শতকের শেষ দিকে এটি ছিল আর্মেনীদের ক্লাব। তখন ঢাকা বাসী এর নাম দেয় আন্টাঘর। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহে যুক্ত থাকার অভিযোগে কয়েকজন সিপাহীকে এখানে ফাঁসি দেওয়া হয়। ১৮৫৮ সালে রানী ভিক্টোরিয়া ভারতের শাষণভার গ্রহণের পর এর নাম ভিক্টোরিয়া পার্ক। সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের নামানুসারে এই পার্কের নাম হয় বাহাদুর শাহ পার্ক।

পরী বিবির মাজারঃ- পরী বিবি ছিলেন শায়েস্তা খনের মেয়ে। তার নাম ইরান দুখত ওরফে পরী বিবি । ১৬৮৪ সালে পরী বিবি মৃত্যুর পর তার কবরের উপর বর্গাকারে একাট ইমারত নির্মান করা হয়। ইমারতটির প্রতি বাহু ৬০ ফুট লম্বা। চার কোনে চারটি মিনার আছে। তাজমহলের অনুকরনে এর মাঝে নয়টি ভাগ করা এবং মাঝের কামরায় পরী বিবির কবর। কবরটি সাদা ও কালো মার্বেলে তৈরি। এই ইমারতে একটি গম্ভুজ আছে। গম্ভুজের উপরের ভাগ তামা দিয়ে আবৃত।

লালবাগ শাহী মসজিদঃ- ১৭০৪ খ্রীঃ লালবাগে দুর্গের দক্ষিণ তোরনের কিছু দক্ষিনে স্থপিত হয় একটি মসজিদ। শাহাতজাদা ফররুখ সীয়ার সুবেদার থাকাকালীন সময় এই মসজিদ নির্মান করেন।

হোসেনী দালানঃ- মোঘল আমলে বেশ কয়েক জন শিয়া সম্প্রদায় ভুক্ত হওয়ায় ঢাকা মহানগরীতে শিয়াদের বিশেষ প্রতিপত্তি দেখা যায়। এ সময় মহররম উৎসব আনুষ্ঠানিক ভাবে পালন করার জন্য বেশ কয়েকটি হোসেনী দালান নির্মাত হয়। বর্তমানে যেটি হোসেনী দালান বলে পরিচিত সেটি মীর মুরাদের বকসী বাজারস্থ হোসেনী দালান।

ষাট গম্ভুজ মসজিদঃ- বাগের হাট জেলায় অবস্থিত পীর জাহান আলী নির্মিত ষাট গম্ভুজ মসজিদটি প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন।

কুসুম্বা মসজিদঃ মধ্যযুগে সুলতানী আমলে যেসব মসুজিদ গড়ে উঠেছিল তন্মধ্যে কুসুম্বা মসজিদ অন্যতম। এটি নওগা জেলায় অবস্থিত। রাজশাহী – নওগা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। এ নির্মাণ শৈলী অপরুপ।

জয়কালী মন্দিরঃ প্রায় ১৭ শতকে নির্মিত দুটি মন্দিরকে একত্রে বলে জয়কালী মন্দির। ঢাকার ঠাটারি বাজারের পূর্ব দিকে দেওয়াল ঘেরা স্থানে মন্দির দুটি অবস্থিত।

সাত গম্ভুজ মসজিদঃ ঢাকার ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোড থেকে দুই মাইল উত্তরে মোহাম্মদপুরের একটি বিলের পূর্ব সীমানায় এটি অবস্থিত। এই মসজিদটি ৪৮ হাত লম্বা। এর উপরে তিনটি গম্ভুজ আছে। মসজিদের চারকোনে আছে চারটি মিনার। প্রতিটির উপরে আছে একটি করে গম্বুজ । ১৬শ শতাব্দীতে শায়েস্তা খান এটি নির্মান করেছিলেন।

তারা মসজিদঃ- এটি শায়েস্তা খানের আমলে নির্মিত হয়।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরঃ- সলিমুল্লাহ হলের প্রায় আধা মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে এবং ঢাকেশ্বরী রাস্তার উত্তর পাশে ঢাকেশ্বরী মন্দির অবস্থিত। দেওয়াল ঘেরা একটি স্থানে মন্দিরগুলো অবস্থিত। পূর্বদিকে প্রধান মন্দিরে ছিল ঢাকেশ্বরী দেবীর মূর্তি। পশ্চিম দিকে এক সারিতে আছে চারটি ছোট মন্দির। পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে একটি দীঘি। ১৭ শতকে নির্মিত এই মন্দিরটি সম্রাট আকবরের সেনাপতি রাজা মানসিংহ তৈরি করেছিলেন বলে মনে করা হয়।

তেজগাঁও গীর্জাঃ- ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় ১৬৭৭ খ্রীস্টাব্দে নির্মিত সবচেয়ে প্রাচীন গীর্জা।

বিনত্ বিবির মসজিদঃ- নারিন্দা পুলের কাছে বর্গাকার এই মসজিদটি ১৪৬৬ সালে তৈরি। এর প্রতি দেওয়াল ১৩ হাত লম্বা। এক গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদের ভিতরের দেওয়ালের শিলালিপি থেকে জানা যায় মোসাম্মৎ বিনত্ নামের একজন মহিলা এটি নির্মান করেছিলেন।এটি ঢাকার সবচেয়ে বড় মসজিদ।

শিখ মন্দিরঃ- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগারের পশ্চিম দিকে অবস্থিত। সুবেদার ইসলাম খানের ভাই সুজাত খানের নামানুসারে এই এলাকার নাম ছিল সুজাতপুর। আর এই মন্দিরটির নাম ছিল সুজাতপুর শিখ মন্দির। শিখদের মতে ১৭ শতকের প্রথম ভাগে সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময় শিখ গুরু আলমসত সাহেবএটি নির্মান করেন। বর্গাকার মন্দিরটির প্রধান কামরায় আছে শিখদেও পবিত্র গ্রন্থ “সাহেব”।

গোকূল মেড়ঃ- ৪র্থ শতকে গুপ্তযুগে নির্মিত একটি প্রাচীন মন্দির। এর বর্তমান উচ্চতা ৪৩ ফুট । এতে ১৭২ টি কামরা ছিল। একে লক্ষীন্দরের মেড় ও বলা হয়।

জিয়া স্মৃতি যাদুঘরঃ- বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ‘জিয়া স্মৃতি যাদুঘর’ (চট্টগ্রামের পুরাতন সার্কিট হাউজ) উদ্বোধন করেন ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ সালে। চট্টগ্রাম সাকির্ট হাউসে ১৯৮১ সালের ৩০শে মে রাতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হন। পরে সরকার এই সার্কিট হাউজকে জিয়া স্মৃতি যাদুঘরে রুপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেন। এই যাদুঘরের নির্মান কাজ শেষ করতে ব্যয় হয় ২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। যাদুঘরের নিচতলায় ২০০ আসনের এশটি মিলনায়তন, একটি সেমিনার কক্ষ, গবেষণা পাঠাগার ও অফিস কক্ষ রয়েছে। দোতালায় ১২ টি গ্যলারি রয়েছে। তন্মধ্যে ৬টি পূর্ব দিকে ৬টি পশ্চিম দিকে।

ঢাকা নগর যাদুঘরঃ- ১৯৯৬ সালের ২০ জুলাই নগর ভবনে ঢাকা নগর যাদুঘর উদ্ভোদন করেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা নগর যাদুঘর হচ্ছে ঢাকা সম্পর্কীত যাদুঘর। এ যাদুঘরে যা কিছু শোভা পাচ্ছে তা সবই ঢাকা শহরকে ঘিরে। শুধু একটি শহরকে কেন্দ্র করে একটি যাদুঘর গড়ে তোলা সারা দক্ষিন পূর্ব এশিয়াতে প্রথম। ঢাকা মহানগরীর ঘটনা বহুল ইতিহাস ও সামগ্রিক পরিচয়  বস্তু নিদর্শনের মাধ্যমে জনসমক্ষে তুলে ধরা, নাগরিকদের মধ্যে ঐতিহ্য চেতনা সৃষ্টি করা, ঢাকা নগরীর বিভিন্ন সমস্যার উপর আলোক পাত করে। নগরবাসীকে সচেতন করে তোলা এবং ঢাকার নগর সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল দস্তাবেজ সংরক্ষণ করা ঢাকা নগর যাদুঘরের প্রধান উদ্দেশ্য।

জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরঃ- রাজশাহীতে ১৯১০ সালে “বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি” নামে কুমার শরৎ রায় কতৃক ‘বরেন্দ্র গবেষণা যাদুঘর’ বাংলাদেশের প্রথম যাদুঘর। ১৯৬৪ সাল থেকে এর পরিচালনার ভার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহন করেছে। এখানে পাথরের মূর্তির সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। পাথরের মূর্তির এই বিপূল সংগ্রহ দেশের অন্য কোন যাদুঘরে নেই। বরেন্দ্র যাদুঘর কর্তৃক সংগৃহীত মূর্তির মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো ব্রহ্মা, দুর্গাসিংহ বাহিনী, গনেশ, মা ও শিশু, খাদিরবনী তারা ইত্যাদি।

বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘর ঃ ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা যাদুঘর। পরবর্তীতে ঢাকা যাদুঘরের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় জাতীয় যাদুঘর এবং ১৯৮৩ সালের ১৭ নভেম্বর ত্রিতল বিশিষ্ট নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় শাহবাগে। আবহমান বাংলার শিল্প, সাহিত্য, ঐতিহ্য, ইতিহাসের স্মৃতি চিহ্ন সযতেœ রক্ষিত আছে এ যাদুঘরে।

মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরঃ- মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে “মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর”। ৫নং সেগুন বাগিচা রোডে এর উদ্যোক্তা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি ট্রাষ্ট।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমীঃ- শিশুদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ এবং তাদের আত্মশক্তি ও আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলার জন্য ১৫ জুলাই ১৯৭৭ সালে পুরনো হাইকোর্ট এলাকায় শিশু একাডেমীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। শিশুদের প্রতিভার স্বীকৃতি দানের উদ্দেশ্যে শিশু একাডেমী ১৯৭৮ সাল থেকে জাতীয় শিশু কিশোর প্রতিযোগিতা প্রবর্তন করে।

বাংলা একাডেমীঃ- বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৫ সালের ১ডিসেম্বর। ১৯৫৬ সালের ডা. মুহাম্মদ এনামুল হক বাংলা একাডেমীর প্রথম পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল পূর্বপাকিস্তন আইন পরিষদে ‘দি বেংগলী একাডেমী অ্যাক্ট ১৯৫৭’ গৃহীত হয়। এই আইনে বাংলা একাডেমীকে একটি স্বায়ত্ব শাষিত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯৫৭ সালের ১০ আগষ্ট উক্ত আইন বলবৎ হয়। এই আইনে বাংলা একাডেমী ‘কাউন্সিল’ গঠণের বিধান থাকায় একাডেমীর আয়োজক সমিতি কাউন্সিল এর মর্যাদা লাভ করে। কাউন্সিল এর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালের ২৬শে মার্চ। বাংলা একাডেমীর কাজ শুরু হয় গবেষণা বিভাগ, অনুবাদ বিভাগ, সংকলন ও প্রকাশনা বিভাগ এবং সংস্কৃতি বিভাগ নামে চারটি বিভাগ নিয়ে।

বঙ্গ ভবনঃ- স্বাধীনতা লাভের পরে ১৯৭২ সনে ১২ জানুয়ারী প্রথম সংবিধানের প্রেসিডেন্টেধামলে সাবেক পূর্ব পাকিস্তান গভর্নর হাইজের নাম বঙ্গভবন রাখা হয়। বঙ্গভবন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন। বঙ্গভবনের নামটির সূচনা ১৯৭২ সনের শুরু থেকেই।

উত্তরা গণভবনঃ- নাটোর শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দুরে দিঘাপাতিয়া নামক স্থানে উত্তরা গণভবন অবস্থিত। ১৮৯৭ সনে রাজা প্রমোদ নাথ রায়ের সময় ৪৩ একর জায়গা জুড়ে এ প্রসাদ তৈরী হয়। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের সময় রাজ পরিবার ভারতে চলে যাওয়ায় প্রজাসস্বত্ব আইন অনুযায়ী সরকার এটি লাভ করেন। ২৪ জুলাই ১৯৬৭ সালে এ ভবনটিকে গভর্নর হাউস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবর রহমান এটার নাম পরিবর্তন করে রাখেন উত্তরা গণভবন। ১৯৮০ সাল থেকে এখানে কয়েকবার মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এটি দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ভবন নামের খ্যাত।

তিন নেতার মাজারঃ- শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে অবিভক্ত বাংলার তিন নক্ষত্র রাজনৈতিক ও প্রশাসক শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এ. কে. ফজলুল হক ও খাজা নাজিমুদ্দিনের কবর। অপূর্ব স্থাপত্যশৈলর এক নিদর্শন এটি। এর স্থাপতি মাসুদ আহমেদ।

শিলাইদহঃ- কুষ্টিয়া জেলায় অবস্থিত। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ির জন্য বিখ্যাত।

ছেউড়িয়াঃ- কুষ্টিয়ার কুমার খালীতে অবস্থিত। লালন শাহ্ এর সমাধির জন্য বিখ্যাত।

আগুন মুখোঃ- পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা থানার বড় বাইশ মিয়ার উত্তর ভাগে পাঁচটি নদীর মিলিত হবার স্থানকে আগুন মুখো বলা হয়। ঝড়ের সময় এখানে নদীর ঢেউ গুলো আগুনের মতো রক্তাক্ত হয় বলে এর নাম আগুন মুখো রাখা হয়।

সুন্দরবনঃ- বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত। পৃথিবীব সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন। ভারতের চব্বিশ পরগণা এবং বাংলাদেশের খুলনা ও পটুয়াখালী জেলার দক্ষিনাংশ সুন্দরবনের অন্তর্ভূক্ত। এ বনে অত্যধিক সুন্দরী কাঠ জন্মে বলে এর নাম করন করা হয়েছে সুন্দরবন। সুন্দরবন পূর্ব পশ্চিমে ১৬০ মাইল দীর্ঘ এবং উত্তর দক্ষিণে ৮০ মাইল প্রশস্ত। এটি বাংলাদেশের জাতীয় বন।

সেন্টমার্টিন দ্বীপঃ- বলতে গেলে এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এই দ্বীপটি প্রায় তিনশো বছরের পুরনো। এখানে প্রচুর চুনাপাথর পাওয়া যায়। দ্বীপটির আয়তন ৫ মাইল। লোকবসতি প্রায় তিন হাজার। এর অপর নাম নারিকেল জিঞ্জিরা।

Download From Google Drive

Download

আরো পড়ুনঃ-

Download From Dropbox

Download

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here