এস.এস.সি বাংলা ১ম পত্র অধ্যায় – ২: গদ্য – দেনাপাওনা এর সকল তথ্য ও MCQ প্রশ্নোত্তর PDF ডাউনলোড করুন

নবম-দশম শ্রেণির দেনাপাওনা অধ্যায়ের  সকল তথ্য ও MCQ প্রশ্নোত্তর পিডিএফ Download 

SSC Bangla 1st Paper MCQ Question With Answer

এখানের সবগুলো প্রশ্ন ও উত্তর পিডিএফ আকারে নিচে দেওয়া লিংক থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন।

লেখক পরিচিতি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ২৫শে বৈশাখ ১২৬৮ সালে (৭ই মে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা তিনি লাভ করেননি, কিন্তু সাহিত্যের বিচিত্র ক্ষেত্রে তাঁর পদচারণা এক বিস্ময়ের বিষয়। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই অসামান্য প্রতিভাধর ব্যক্তি। বাল্যকালেই তাঁর কবিপ্রতিভার উন্মেষ ঘটে। মাত্র পনের বছর বয়সে তাঁর বনফুল কাব্য প্রকাশিত হয়। ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের জন্য এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বস্তুত তাঁর একক সাধনায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সকল শাখায় দ্রুত উন্নতি লাভ করে এবং বিশ্বদরবারে গৌরবের আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি একাধারে সাহিত্যিক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, সুরকার, নাট্য প্রযোজক ও অভিনেতা। কাব্য, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, গান ইত্যাদি সাহিত্যের সকল শাখাই তাঁর অবদানে সমৃদ্ধ। তাঁর অজস্র রচনার মধ্যে ‘মানসী’, ‘সোনার তরী’, ‘চিত্রা’, ‘কল্পনা’, ‘ক্ষণিকা’, ‘বলাকা’, ‘পুনশ্চ’, ‘চোখের বালি’, ‘গোরা’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘যোগাযোগ’, ‘শেষের কবিতা’, ‘বিসর্জন’, ‘ডাকঘর’, ‘রক্তকরবী’, ‘গল্পগুচ্ছ’, ‘বিচিত্র প্রবন্ধ’ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২২শে শ্রাবণ ১৩৪৮ সালে (৭ই আগস্ট ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ) কলকাতায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ২৫শে বৈশাখ ১২৬৮ সালে (৭ই মে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা তিনি লাভ করেননি, কিন্তু সাহিত্যের বিচিত্র ক্ষেত্রে তাঁর পদচারণা এক বিস্ময়ের বিষয়। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই অসামান্য প্রতিভাধর ব্যক্তি। বাল্যকালেই তাঁর কবিপ্রতিভার উন্মেষ ঘটে। মাত্র পনের বছর বয়সে তাঁর বনফুল কাব্য প্রকাশিত হয়। ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের জন্য এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বস্তুত তাঁর একক সাধনায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সকল শাখায় দ্রুত উন্নতি লাভ করে এবং বিশ্বদরবারে গৌরবের আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি একাধারে সাহিত্যিক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, সুরকার, নাট্য প্রযোজক ও অভিনেতা। কাব্য, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, গান ইত্যাদি সাহিত্যের সকল শাখাই তাঁর অবদানে সমৃদ্ধ। তাঁর অজস্র রচনার মধ্যে ‘মানসী’, ‘সোনার তরী’, ‘চিত্রা’, ‘কল্পনা’, ‘ক্ষণিকা’, ‘বলাকা’, ‘পুনশ্চ’, ‘চোখের বালি’, ‘গোরা’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘যোগাযোগ’, ‘শেষের কবিতা’, ‘বিসর্জন’, ‘ডাকঘর’, ‘রক্তকরবী’, ‘গল্পগুচ্ছ’, ‘বিচিত্র প্রবন্ধ’ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২২শে শ্রাবণ ১৩৪৮ সালে (৭ই আগস্ট ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ) কলকাতায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

পাঁচ ছেলের পর যখন এক কন্যা জন্মিল তখন বাপ-মায়ে

পাঁচ ছেলের পর যখন এক কন্যা জন্মিল তখন বাপ-মায়ে অনেক আদর করিয়া তাহার নাম রাখিলেন নিরূপমা। এ গোষ্ঠীতে এমন শৌখিন নাম ইতিপূর্বে কখনও শোনা যায় নাই। প্রায় ঠাকুর-দেবতার নামই প্রচলিত ছিল-গণেশ, কার্তিক, পার্বতী তাহার উদাহরণ। এখন নিরূপমার বিবাহের প্রস্তাব চলিতেছে। তাহার পিতা রামসুন্দর মিত্র অনেক খোঁজ করেন কিন্তু পাত্র কিছুতেই মনের মতন হয় না। অবশেষে মস্ত এক রায় বাহাদুরের ঘরের একমাত্র ছেলেকে সন্ধান করিয়া বাহির করিয়াছেন। উক্ত রায় বাহাদুরের পৈতৃক বিষয়-আশয় যদিও অনেক হ্রাস হইয়া আসিয়াছে কিন্তু বনেদী ঘর বটে।

বরপক্ষ হইতে দশ হাজার টাকা পণ এবং বহুল দানসামগ্রী

বরপক্ষ হইতে দশ হাজার টাকা পণ এবং বহুল দানসামগ্রী চাহিয়া বসিল। রামসুন্দর কিছুমাত্র বিবেচনা না করিয়া তাহাতেই সম্মত হইলেন : এমন পাত্র কোনোমতে হাতছাড়া করা যায় না। কিছুতেই টাকার জোগাড় আর হয় না। বাঁধা দিয়া, বিক্রয় করিয়া, অনেক চেষ্টাতেও হাজার ছয়-সাত বাকি রহিল। এ দিকে বিবাহের দিন নিকট হইয়া আসিয়াছে। অবশেষে বিবাহের দিন উপস্থিত হইল। নিতান্ত অতিরিক্ত সুদে একজন বাকি টাকাটা ধার দিতে স্বীকার করিয়াছিল কিন্তু সময়কালে সে উপস্থিত হইল না। বিবাহসভায় একটা তুমুল গোলযোগ বাধিয়া গেল।

রামসুন্দর আমাদের রায় বাহাদুরের হাতেপায়ে ধরিয়া বলিলেন

রামসুন্দর আমাদের রায় বাহাদুরের হাতেপায়ে ধরিয়া বলিলেন, ‘শুভকার্য সম্পন্ন হইয়া যাক, আমি নিশ্চয় টাকাটা শোধ করিয়া দিব।’ রায় বাহাদুর বলিলেন, ‘টাকা হাতে না পাইলে বর সভাস্থ করা যাইবে না।’ এই দুর্ঘটনায় অন্তঃপুরে একটা কান্না পড়িয়া গেল। এই গুরুতর বিপদের যে মূল কারণ সে চেলি পরিয়া, গহনা পরিয়া, কপালে চন্দন লেপিয়া চুপ করিয়া বসিয়া আছে। ভাবি শ্বশুরকুলের প্রতি যে তাহার খুব-একটা ভক্তি কিংবা অনুরাগ জন্মিতেছে, তাহা বলা যায় না।

ইতিমধ্যে একটা সুবিধা হইল। বর সহসা তাহার

ইতিমধ্যে একটা সুবিধা হইল। বর সহসা তাহার পিতৃদেবের অবাধ্য হইয়া উঠিল। সে বাপকে বলিয়া বসিল, ‘কেনাবেচা-দরদামের কথা আমি বুঝি না; বিবাহ করিতে আসিয়াছি, বিবাহ করিয়া যাইব।’ বাপ যাহাকে দেখিল তাহাকেই বলিল, ‘দেখেছেন মহাশয়, আজ কালকার ছেলেদের ব্যবহার?’ দুই/একজন প্রবীণ লোক ছিল, তাহারা বলিল, ‘শাস্ত্রশিক্ষা নীতিশিক্ষা একেবারে নাই, কাজেই।’

বর্তমান শিক্ষার বিষময় ফল নিজের সন্তানের মধ্যে প্রত্যক্ষ করিয়া

বর্তমান শিক্ষার বিষময় ফল নিজের সন্তানের মধ্যে প্রত্যক্ষ করিয়া রায়বাহাদুর হতোদ্যম হইয়া বসিয়া রহিলেন। বিবাহ একপ্রকার বিষণ্ণ নিরানন্দভাবে সম্পন্ন হইয়া গেল। শ্বশুরবাড়ি যাইবার সময় নিরূপমাকে বুকে টানিয়া লইয়া বাপ আর চোখের জল রাখিতে পারিলেন না। নিরু জিজ্ঞাসা করিল, ‘তারা কি আর আমাকে আসতে দেবে না, বাবা ?’ রামসুন্দর বলিলেন, ‘কেন আসতে দেবে না মা। আমি তোমাকে নিয়ে আসব।’

রামসুন্দর প্রায়ই মেয়েকে দেখিতে যান কিন্তু বেহাইবাড়িতে

রামসুন্দর প্রায়ই মেয়েকে দেখিতে যান কিন্তু বেহাইবাড়িতে তাঁর কোনো প্রতিপত্তি ছিল না। চাকরগুলো পর্যন্ত তাঁহাকে নিচু নজরে দেখে। অন্তঃপুরের বাহিরে একটা স্বতন্ত্র ঘরে পাঁচ মিনিটের জন্য কোনোদিনবা মেয়েকে দেখিতে পান, কোনো দিনবা দেখিতে পান না। কুটুম্বগৃহে এমন করিয়া আর অপমান তো সহ্য হয় না। রামসুন্দর স্থির করিলেন, যেমন করিয়া হউক টাকাটা শোধ করিয়া দিতে হইবে।

কিন্তু যে ঋণভার কাঁধে চাপিয়াছে তাহারই ভার সামলানো দুঃসাধ্য।

কিন্তু যে ঋণভার কাঁধে চাপিয়াছে তাহারই ভার সামলানো দুঃসাধ্য। খরচপত্রের অত্যন্ত টানাটানি পড়িয়াছে এবং পাওনাদারদের দৃষ্টিপথ এড়াইবার জন্য সর্বদাই নানারূপ হীন কৌশল অবলম্বন করিতে হইতেছে। এ দিকে শ্বশুরবাড়ি উঠিতে বসিতে মেয়েকে খোঁটা লাগাইতেছে। পিতৃগৃহের নিন্দা শুনিয়া ঘরে দ্বার দিয়া অশ্রুবিসর্জন তাহার নিত্যক্রিয়ার মধ্যে দাঁড়াইয়াছে। বিশেষত শাশুড়ির আক্রশ আর কিছুতেই মেটে না। যদি কেহ বলে, ‘আহা কী শ্রী। বউয়ের মুখখানি দেখিলে চোখ জুড়াইয়া যায়।’ শাশুড়ি ঝংকার দিয়া উঠিয়া বলে, ‘শ্রী তো ভারি। যেমন ঘরের মেয়ে তেমনি শ্রী।’

এমনকি, বউয়ের খাওয়াপরারও যত্ন হয় না।

এমনকি, বউয়ের খাওয়াপরারও যত্ন হয় না। যদি কোনো দয়াপরতন্ত্র প্রতিবেশিনী কোনো ক্রটির উল্লেখ করে, শাশুড়ি বলে, ‘ওই ঢের হয়েছে।’ অর্থাৎ বাপ যদি পুরা দাম দিত তো মেয়ে পুরা যত্ন পাইত। সকলেই এমন ভাব দেখায় যেন বধূর এখানে কোনো অধিকার নাই, ফাঁকি দিয়া প্রবেশ করিয়াছে। বোধ হয়, কন্যার এই সকল অনাদর এবং অপমানের কথা বাপের কানে গিয়া থাকিবে। তাই রামসুন্দর অবশেষে বসতবাড়ি বিক্রয়ের চেষ্টা করিতে লাগিলেন।

কিন্তু ছেলেদের যে গৃহহীন করিতে বসিয়াছেন সে কথা তাহাদের নিকট

কিন্তু ছেলেদের যে গৃহহীন করিতে বসিয়াছেন সে কথা তাহাদের নিকট হইতে গোপনে রাখিলেন। স্থির করিয়াছিলেন, বাড়ি বিক্রয় করিয়া সেই বাড়ি ভাড়া লইয়া বাস করিবেন; এমন কৌশলে চলিবেন যে, তাঁহার মৃত্যুর পূর্বে এ কথা ছেলেরা জানিতে পারিবে না। কিন্তু ছেলেরা জানিতে পারিল। সকলে আসিয়া কাঁদিয়া পড়িল। বিশেষত বড়ো তিনটি ছেলে বিবাহিত এবং তাহাদের কাহারোবা সন্তান আছে। তাদের আপত্তি অত্যন্ত গুরুতর হইয়া দাঁড়াইল, বাড়ি বিক্রয় স্থগিত হইল।

তখন রামসুন্দর নানা স্থান হইতে বিস্তর সুদে অল্প অল্প করিয়া

তখন রামসুন্দর নানা স্থান হইতে বিস্তর সুদে অল্প অল্প করিয়া টাকা ধার করিতে লাগিলেন। এমন হইল যে, সংসারের খরচ আর চলে না। নিরু বাপের মুখ দেখিয়া সব বুঝিতে পারিল। বৃদ্ধের পক্ব কেশে, শুষ্ক মুখে এবং সদ্যসংকুচিত ভাবে দৈন্য এবং দুশ্চিন্তা প্রকাশ হইয়া পড়িল। মেয়ের কাছে যখন বাপ অপরাধী তখন সে অপরাধের অনুতাপ কি আর গোপন রাখা যায়। রামসুন্দর যখন বেহাইবাড়ির অনুমতিক্রমে ক্ষণকালের জন্য কন্যার সাক্ষাৎলাভ করিতেন তখন বাপের বুক যে কেমন করিয়া ফাটে তাহা তাঁহার হাসি দেখিলেই টের পাওয়া যাইত।

সেই ব্যথিত পিতৃহৃদয়কে সান্তনা দিবার উদ্দেশ্যে দিনকতক বাপের বাড়ি

সেই ব্যথিত পিতৃহৃদয়কে সান্তনা দিবার উদ্দেশ্যে দিনকতক বাপের বাড়ি যাইবার জন্য নিরু নিতান্ত অধীর হইয়া উঠিয়াছে। বাপের ম্লান মুখ দেখিয়া সে আর দূরে থাকিতে পারে না। একদিন রামসুন্দরকে কহিল, ‘বাবা, আমাকে একবার বাড়ি লইয়া যাও।’ রামসুন্দর বলিলেন, ‘আচ্ছা।’ কিন্তু তাঁহার কোনো জোর নাই-নিজের কন্যার উপরে পিতার যে স্বাভাবিক অধিকার আছে তাহা যেন পণের টাকার পরিবর্তে বন্ধক রাখিতে হইয়াছে। এমনকি, কন্যার দর্শন সেও অতি সংকোচে ভিক্ষা চাহিতে হয় এবং সময়বিশেষে নিরাশ হইলে দ্বিতীয় কথাটি কহিবার মুখ থাকে না।

কিন্তু মেয়ে আপনি বাড়ি আসিতে চাহিলে বাপ তাহাকে না আনিয়া

কিন্তু মেয়ে আপনি বাড়ি আসিতে চাহিলে বাপ তাহাকে না আনিয়া কেমন করিয়া থাকে তাই বেহাইয়ের নিকট সে সম্বন্ধে দরখাস্ত পেশ করিবার পূর্বে রামসুন্দর কত হীনতা, কত অপমান, কত ক্ষতি স্বীকার করিয়া যে তিনটি হাজার টাকা সংগ্রহ করিয়াছিলেন, সে ইতিহাস গোপন থাকাই ভালো।

নোট কখানি রুমালে জড়াইয়া চাদরে বাঁধিয়া রামসুন্দর বেহাইয়ের

নোট কখানি রুমালে জড়াইয়া চাদরে বাঁধিয়া রামসুন্দর বেহাইয়ের নিকট গিয়া বসিলেন। প্রথমে হাস্যমুখে পাড়ার খবর পাড়িলেন। হরেকৃষ্ণের বাড়িতে একটা মস্ত চুরি হইয়া গিয়াছে, তাহার অদ্যোপান্ত বিবরণ বলিলেন; নবীনমাধব ও রাধামাধব দুই ভাইয়ের তুলনা করিয়া বিদ্যাবুদ্ধি ও স্বভাব সম্বন্ধে রাধামাধবের সুখ্যাতি এবং নবীনমাধবের নিন্দা করিলেন; শহরে একটা নতুন ব্যামো আসিয়াছে, সে সম্বন্ধে অনেক আজগবি আলোচনা করিলেন; অবশেষে হুঁকাটি নামাইয়া রাখিয়া কথায় কথায় বলিলেন, ‘হাঁ হাঁ, বেহাই, সেই টাকাটা বাকি আছে বটে।

রোজই মনে করি, যাচ্ছি অমনি হাতে করে কিছু নিয়ে যাই কিন্তু

রোজই মনে করি, যাচ্ছি অমনি হাতে করে কিছু নিয়ে যাই কিন্তু সময়কালে মনে থাকে না। আর ভাই, বুড়ো হয়ে পড়েছি।’ এমনি এক দীর্ঘ ভূমিকা করিয়া পঞ্জরের তিনখানি অস্থির মতো সেই তিনখানি নোট যেন অতি সহজে, অতি অবহেলে বাহির করিলেন। সবেমাত্র তিন হাজার টাকার নোট দেখিয়া রায় বাহাদুর অট্টহাস্য করিয়া উঠিলেন। বলিলেন, ‘থাক, বেহাই, ওতে আমার কাজ নেই।’ একটা প্রচলিত বাংলা প্রবাদের উল্লেখ করিয়া বলিলেন, সামান্য কারণে হাতে দুর্গন্ধ করিতে তিনি চান না।

এই ঘটনার পরে মেয়েকে বাড়ি আনিবার প্রস্তাব কাহারও মুখে

এই ঘটনার পরে মেয়েকে বাড়ি আনিবার প্রস্তাব কাহারও মুখে আসে না-কেবল রামসুন্দর ভাবিলেন, ‘সেসকল কুটুম্বিতার সংকোচ আমাকে আর শোভা পায় না।’ মর্মাহতভাবে অনেকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া অবশেষে মৃদুস্বরে কথাটা পাড়িলেন। রায় বাহাদুর কোনো কারণমাত্র উল্লেখ না করিয়া বলিলেন, ‘সে এখন হচ্ছে না।’ এই বলিয়া কর্মোপলক্ষে স্থানান্তরে চলিয়া গেলেন।

রামসুন্দর মেয়ের কাছে মুখ না দেখাইয়া কম্পিত হস্তে কয়েকখানি

রামসুন্দর মেয়ের কাছে মুখ না দেখাইয়া কম্পিত হস্তে কয়েকখানি নোট চাদরের প্রান্তে বাঁধিয়া বাড়ি ফিরিয়া গেলেন। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিলেন, যতদিন না সমস্ত টাকা শোধ করিয়া দিয়া অসংকোচে কন্যার উপরে দাবি করিতে পারিবেন ততদিন আর বেহাইবাড়ি যাইবেন না। বহুদিন গেল। নিরূপমা লোকের উপর লোক পাঠায় কিন্তু বাপের দেখা পায় না। অবশেষে অভিমান করিয়া লোক পাঠানো বন্ধ করিল তখন রামসুন্দরের মনে বড়ো আঘাত লাগিল কিন্তু তবু গেলেন না।

আশ্বিন মাস আসিল। রামসুন্দর বলিলেন, ‘এবার পূজার

আশ্বিন মাস আসিল। রামসুন্দর বলিলেন, ‘এবার পূজার সময় মাকে ঘরে আনিবই, নহিলে আমি-’। খুব একটা শক্তরকম শপথ করিলেন। পঞ্চমী কি ষষ্ঠীর দিনে আবার চাদরের প্রান্তে গুটিকতক নোট বাঁধিয়া রামসুন্দর যাত্রার উদ্যোগ করিলেন। পাঁচ বৎসরের এক নাতি আসিয়া বলিল, ‘দাদা, আমার জন্যে গাড়ি কিনতে যাচ্ছিস?’ বহুদিন হইতে তাহার ঠেলাগাড়িতে চড়িয়া হাওয়া খাইবার শখ হইয়াছে কিন্তু কিছুতেই তাহা মিটিবার উপায় হইতেছে না। ছয় বৎসরের এক নাতিনি আসিয়া সরোদনে কহিল, পূজার নিমন্ত্রণে যাইবার মতো তাহার একখানিও ভালো কাপড় নাই।

রামসুন্দর তাহা জানিতেন এবং সে সম্বন্ধে তামাক খাইতে খাইতে

রামসুন্দর তাহা জানিতেন এবং সে সম্বন্ধে তামাক খাইতে খাইতে বৃদ্ধ অনেক চিন্তা করিয়াছেন। রায় বাহাদুরের বাড়ি যখন পূজার নিমন্ত্রণ হইবে তখন তাঁহার বধূগণকে অতি যৎসামান্য অলংকারে অনুগ্রহপাত্র দরিদ্রের মতো যাইতে হইবে, এ কথা স্মরণ করিয়া তিনি অনেক দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়াছেন কিন্তু তাহাতে তাঁহার ললাটের বার্ধক্যরেখা গভীরতর অঙ্কিত হওয়া ছাড়া আর কোনো ফল হয় নাই।

দৈন্যপীড়িত গৃহের ক্রন্দনধ্বনি কানে লইয়া বৃদ্ধ তাঁহার

দৈন্যপীড়িত গৃহের ক্রন্দনধ্বনি কানে লইয়া বৃদ্ধ তাঁহার বেহাইবাড়িতে প্রবেশ করিলেন। আজ তাঁহার সে সংকোচভাব নাই; দ্বাররক্ষী এবং ভৃত্যদের মুখের প্রতি সে চকিত সলজ্জ দৃষ্টিপাত দূর হইয়া গিয়াছে, যেন আপনার গৃহে প্রবেশ করিলেন। শুনিলেন, রায় বাহাদুর ঘরে নাই। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করিতে হইবে। মনের উচ্ছ্বাস সংবরণ করিতে না পারিয়া রামসুন্দর কন্যার সহিত সাক্ষাৎ করিলেন। আনন্দে দুই চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল। বাপও কাঁদে, মেয়েও কাঁদে; দুইজনে কেহ আর কথা কহিতে পারে না। এমন করিয়া কিছুক্ষণ গেল। তার পরে রামসুন্দর কহিলেন, ‘এবার তোকে নিয়ে যাচ্ছি মা। আর কোনো গোল নাই।’

এমন সময় রামসুন্দরের জ্যেষ্ঠপুত্র হরমোহন তাঁহার দুটি ছোট ছেলে

এমন সময় রামসুন্দরের জ্যেষ্ঠপুত্র হরমোহন তাঁহার দুটি ছোট ছেলে সঙ্গে লইয়া সহসা ঘরে প্রবেশ করিলেন। পিতাকে বলিলেন, ‘বাবা, আমাদের তবে এবার পথে ভাসালে?’ রামসুন্দর সহসা অগ্নিমূর্তি হইয়া বলিলেন, ‘তোদের জন্য কি আমি নরকগামী হব। আমাকে তোরা আমার সত্য পালন করতে দিবি নে?’ রামসুন্দর বাড়ি বিক্রয় করিয়া বসিয়া আছেন; ছেলেরা কিছুতে না জানিতে পায় তাহার অনেক ব্যবস্থা করিয়াছিলেন কিন্তু তবু তাহারা জানিয়াছে দেখিয়া তাহাদের প্রতি হঠাৎ অত্যন্ত রুষ্ট ও বিরক্ত হইয়া উঠিলেন।

তাঁহার নাতি তাঁহার দুই হাঁটু সবলে জড়াইয়া ধরিয়া মুখ তুলিয়া কহিল,

তাঁহার নাতি তাঁহার দুই হাঁটু সবলে জড়াইয়া ধরিয়া মুখ তুলিয়া কহিল, ‘দাদা, আমাকে গাড়ি কিনে দিলে না?’ নতশির রামসুন্দরের কাছে বালক কোনো উত্তর না পাইয়া নিরুর কাছে গিয়া কহিল, ‘পিসিমা, আমাকে একখানা গাড়ি কিনে দেবে?’ নিরূপমা সমস্ত ব্যাপার বুঝিতে পারিয়া কহিল, ‘বাবা, তুমি যদি আর এক পয়সা আমার শ্বশুরকে দাও তা হলে আর তোমার মেয়েকে দেখতে পাবে না, এই তোমার গা ছুঁয়ে বললুম।’ রামসুন্দর বলিলেন, ‘ছি মা, অমন কথা বলতে নেই। আর এ টাকাটা যদি আমি না দিতে পারি তাহলে তোর বাপের অপমান আর তোরও অপমান।’

নিরু কহিল, ‘টাকা যদি দাও তবেই অপমান। তোমার মেয়ের কি

নিরু কহিল, ‘টাকা যদি দাও তবেই অপমান। তোমার মেয়ের কি কোনো মর্যাদা নেই। আমি কি কেবল একটা টাকার থলি, যতক্ষণ টাকা আছে ততক্ষণ আমার দাম! না বাবা, এ টাকা দিয়ে তুমি আমাকে অপমান কোরো না। তাছাড়া আমার স্বামী তো এ টাকা চান না।’ রামসুন্দর কহিলেন, ‘তা হলে তোমাকে যেতে দেবে না, মা।’ নিরূপমা কহিল, ‘না দেয় তো কী করবে বলো। তুমিও আর নিয়ে যেতে চেয়ো না।’

রামসুন্দর কম্পিত হস্তে নোটবাঁধা চাদরটি কাঁধে তুলিয়া আবার

রামসুন্দর কম্পিত হস্তে নোটবাঁধা চাদরটি কাঁধে তুলিয়া আবার চোরের মতো সকলের দৃষ্টি এড়াইয়া বাড়ি ফিরিয়া গেলেন। কিন্তু রামসুন্দর এই যে টাকা আনিয়াছিলেন এবং কন্যার নিষেধে সে টাকা না দিয়াই চলিয়া গিয়াছেন, সেকথা গোপন রহিল না। কোনো স্বভাবকৌতূহলী দ্বারলগ্নকর্ণ দাসী নিরুর শাশুড়িকে এই খবর দিল। শুনিয়া তাঁহার আর আক্রশের সীমা রহিল না। নিরূপমার পক্ষে তাহার শ্বশুরবাড়ি শরশয্যা হইয়া উঠিল। এ দিকে তাহার স্বামী বিবাহের অল্পদিন পরেই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হইয়া দেশান্তর চলিয়া গিয়াছে এবং পাছে সংসর্গদোষে হীনতা শিক্ষা হয় এই ওজরে সম্প্রতি বাপের বাড়ির আত্মীয়দের সহিত নিরুর সাক্ষাৎকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হইয়াছে।

এই সময়ে নিরুর একটা গুরুতর পীড়া হইল। কিন্তু সেজন্য

এই সময়ে নিরুর একটা গুরুতর পীড়া হইল। কিন্তু সেজন্য তাহার শাশুড়িকে সম্পূর্ণ দোষ দেওয়া যায় না। শরীরের প্রতি সে অত্যন্ত অবহেলা করিত। কার্তিক মাসের হিমের সময় সমস্ত রাত মাথার দরজা খোলা, শীতের সময় গায়ে কাপড় নাই। আহারের নিয়ম নাই। দাসীরা যখন মাঝে মাঝে খাবার আনিতে ভুলিয়া যাইত তখন যে তাহাদের একবার মুখ খুলিয়া স্মরণ করাইয়া দেওয়া, তাহাও সে করিত না। সে পরের ঘরের দাসদাসী এবং কর্তাগৃহিণীদের অনুগ্রহের উপর নির্ভর করিয়া বাস করিতেছে, এই সংস্কার তাহার মনে বদ্ধমূল হইতেছিল। কিন্তু এরূপ ভাবটাও শাশুড়ির সহ্য হইত না। যদি আহারের প্রতি বধূর কোনো অবহেলা দেখিতেন তবে শাশুড়ি বলিতেন, ‘নবাবের বাড়ির মেয়ে কিনা! গরিবের ঘরের অন্ন ওঁর মুখে রোচে না।’

কখনোবা বলিতেন, ‘দেখো না একবার, ছিরি হচ্ছে, দেখো না,

কখনোবা বলিতেন, ‘দেখো না একবার, ছিরি হচ্ছে, দেখো না, দিনে দিনে যেন পোড়াকাঠ হয়ে যাচ্ছে।’ রোগ যখন গুরুতর হইয়া উঠিল তখন শাশুড়ি বলিলেন, ‘ওর সমস্ত ন্যাকামি।’ অবশেষে একদিন নিরু সবিনয়ে শাশুড়িকে বলিল, ‘বাবাকে আর আমার ভাইদের একবার দেখব, মা।’ শাশুড়ি বলিলেন, ‘কেবল বাপের বাড়ি যাইবার ছল।’ কেহ বলিলে বিশ্বাস করিবে না-যেদিন সন্ধ্যার সময় নিরুর শ্বাস উপস্থিত হইল সেইদিন প্রথম ডাক্তার দেখিল এবং সেইদিন ডাক্তারের দেখা শেষ হইল।

বাড়ির বড় বউ মরিয়াছে, খুব ধুম করিয়া অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হইল।

বাড়ির বড় বউ মরিয়াছে, খুব ধুম করিয়া অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হইল। প্রতিমা-বিসর্জনের সমারোহ সম্বন্ধে জেলার মধ্যে রায়চৌধুরীদের যেমন লোকবিখ্যাত প্রতিপত্তি আছে, বড় বউয়ের সৎকার সম্বন্ধে রায়বাহাদুরদের তেমনি একটি খ্যাতি রটিয়া গেল-এমন চন্দনকাষ্ঠের চিতা এ মুলুকে কেহ কখনও দেখে নাই। এমন ঘটা করিয়া শ্রাদ্ধও কেবল রায় বাহাদুরদের বাড়িতেই সম্ভব এবং শুনা যায়, ইহাতে তাঁহাদের কিঞ্চিত ঋণ হইয়াছিল।

রামসুন্দরকে সান্তনা দিবার সময়, তাহার মেয়ের যে কিরূপ মহাসমারোহে

রামসুন্দরকে সান্তনা দিবার সময়, তাহার মেয়ের যে কিরূপ মহাসমারোহে মৃত্যু হইয়াছে, সকলেই তাহার বহুল বর্ণনা করিল। এ দিকে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের চিঠি আসিল, ‘আমি এখানে সমস্ত বন্দোবস্ত করিয়া লইয়াছি অতএব অবিলম্বে আমার স্ত্রীকে এখানে পাঠাইবে।’ রায় বাহাদুরের মহিষী লিখিলেন, ‘বাবা তোমার জন্যে আর একটি মেয়ের সম্বন্ধ করিয়াছি অতএব অবিলম্বে ছুটি লইয়া-এখানে আসিবে।’ এবারে বিশ হাজার টাকা পণ এবং হাতে হাতে আদায়।

রায়বাহাদুর – ব্রিটিশ আমলের সরকারি খেতাব, রাজার মতো সম্ভ্রান্ত

রায়বাহাদুর – ব্রিটিশ আমলের সরকারি খেতাব, রাজার মতো সম্ভ্রান্ত ও প্রতাপশালী ব্যক্তি; তুমুল – প্রবল, ঘোরতর, ভয়ানক; অনুরাগ – আসক্তি, প্রীতি, সোহাগ, মমতা; হতোদ্যম – নিরুদ্যম, উদ্যমহীন; প্রতিপত্তি – সম্মান, মর্যাদা, প্রভাব; খোঁটা – গঞ্জনা, নিন্দা, দোষের প্রতি ইঙ্গিত; নিত্যক্রিয়া – দৈনন্দিন কর্ম, প্রতিদিনের কাজ; আক্রোশ – বিদ্বেষ, ক্রোধ; ঝংকার – গুঞ্জন, বীণা ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্রাদির শব্দ; দয়াপরতন্ত্র – দয়ার্দ্র, দয়ার বশীভূত; আজগবি – অদ্ভুত, অবিশ্বাস্য; পঞ্জর – পাঁজর, বুকের হাড়ের খাঁচা; সরোদনে – কেঁদে কেঁদে; স্বভাবকৌতূহলী দ্বারলগ্নকর্ণ – আড়ালে অবস্থান করে অন্যের কথোপকথন শোনা; শরশয্যা – মৃত্যুশয্যা; বন্দোবস্ত – ব্যবস্থা, আয়োজন।

নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারের রামসুন্দর পাঁচ পুত্র এবং এক কন্যার জনক।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গল্পগুচ্ছ’ থেকে দেনাপাওনা গল্পটি সংকলিত হয়েছে। এটি একটি যৌতুকপ্রথার ভয়াবহ কাহিনি।

নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারের রামসুন্দর পাঁচ পুত্র এবং এক কন্যার জনক। আদরের কন্যা প্রতাপশালী রায়বাহাদুরের একমাত্র পুত্রের সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের সময় পাত্রের পিতা রায়বাহাদুর দশ হাজার টাকা নগদসহ অন্যান্য সামগ্রী বিয়ের যৌতুক হিসেবে দাবি করেন। কন্যার বাপ রাজি হন। বিয়ের সময় নগদ অর্থ বাকি পড়ে যায়। শুরু হয় পিতা ও কন্যার ওপর মানসিক নির্যাতন। নিরূপমার আত্মবিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় আমাদের সমাজের এই ভয়াবহ ব্যাধির কাহিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দরদী হাতে এ গল্পের কাহিনি আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে এবং যারা যৌতুক গ্রহণ করে তাদের প্রতি একধরনের ঘৃণার জন্ম দেয়।

লেখক পরিচিতি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ২৫শে বৈশাখ ১২৬৮ সালে (৭ই মে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা তিনি লাভ করেননি, কিন্তু সাহিত্যের বিচিত্র ক্ষেত্রে তাঁর পদচারণা এক বিস্ময়ের বিষয়। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই অসামান্য প্রতিভাধর ব্যক্তি। বাল্যকালেই তাঁর কবিপ্রতিভার উন্মেষ ঘটে। মাত্র পনের বছর বয়সে তাঁর বনফুল কাব্য প্রকাশিত হয়। ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের জন্য এশীয়দের মধ্যে প্রম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বস্তুত তাঁর একক সাধনায় বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সকল শাখায় দ্রুত উন্নতি লাভ করে এবং বিশ্বদরবারে গৌরবের আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি একাধারে সাহিত্যিক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, সুরকার, নাট্য প্রযোজক ও অভিনেতা। কাব্য, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, গান ইত্যাদি সাহিত্যের সকল শাখাই তাঁর অবদানে সমৃদ্ধ। তাঁর অজস্র রচনার মধ্যে ‘মানসী’, ‘সোনার তরী’, ‘চিত্রা’, ‘কল্পনা’, ‘ক্ষণিকা’, ‘বলাকা’, ‘পুনশ্চ’, ‘চোখের বালি’, ‘গোরা’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘যোগাযোগ’, ‘শেষের কবিতা’, ‘বিসর্জন’, ‘ডাকঘর’, ‘রক্তকরবী’, ‘গল্পগুচ্ছ’, ‘বিচিত্র প্রবন্ধ’ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২২শে শ্রাবণ ১৩৪৮ সালে (৭ই আগস্ট ১৯৪১ খিষ্ট্রাব্দ) কলকাতার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

দেনাপাওনা অধ্যায়ের সকল বহুনির্বাচনী সাজেশন

২. ‘দেনাপাওনা’ গল্পের জীবনপ্রবাহে নিম্নলিখিত চিত্র পাওয়া যায় –
i. রক্ষণশীলতা
ii. ধর্মীয় গোড়ামি
iii. যৌতুক প্রথা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) i ও ii
খ) ii ও iii
গ) i ও iii
ঘ) i, ii ও iii
সঠিক উত্তর: (ঘ)

৩. রায় বাহাদুর বর সভাস্থ করতে চাইলেন না কেন?
ক) পণের টাকা বাকি থাকায়
খ) কণের অশোভন আচরণে
গ) লগ্ন পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায়
ঘ) যৌতুক দিতে অস্বীকার করায়
সঠিক উত্তর: (ক)

৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবি প্রতিভার উন্মেষ ঘটে কখন?
ক) বাল্যকালে
খ) মধ্য বয়সে
গ) পরিণত বয়সে
ঘ) বৃদ্ধ বয়সে
সঠিক উত্তর: (ক)

৫. ‘দেনাপাওনা’ গল্পে রামসুন্দর মিত্রের রায়বাহাদুরের সাথে সম্পর্ক করার কারণ কী?
ক) মস্ত এক রায়বাহাদুর
খ) রাজা-মহারাজা
গ) বনেদি ঘর
ঘ) পাত্র ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট
সঠিক উত্তর: (গ)

৬. জেলার মধ্যে রায়চৌধুরীদের কিসের লোকবিখ্যাত প্রতিপত্তি আছে?
ক) অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়
খ) প্রতিমা বিসর্জনে
গ) অতিথি আপ্যায়নে
ঘ) বনেদী বংশের
সঠিক উত্তর: (খ)

৭. ‘দেনাপাওনা’ গল্পে নিরূপমার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াকে কার বিসর্জনের সাথে তুলনা করা যায়?
ক) সীতা
খ) সরস্বতী
গ) প্রতিমা
ঘ) লক্ষ্মী
সঠিক উত্তর: (গ)

৮. ‘দেনাপাওনা’ গল্পে কে ঘরে দ্বার দিয়ে অশ্রু বিসর্জন করে?
ক) নিরূপমা
খ) নিরূপমার মা
গ) রামসুন্দর মিত্র
ঘ) রায় বাহাদুরের স্ত্রী
সঠিক উত্তর: (ক)

৯. রবীন্দ্রনাথকে বিশ্বকপি বলার ক্ষেত্রে কোন মতবাদটি গ্রহণযোগ্য –
ক) আধুনিক রুচিবোধসম্পন্ন সাহিত্য
খ) নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি
গ) আন্তর্জাতিক দৃষ্টিসম্পন্ন
ঘ) বিশ্বব্যাপী সমাদৃত সাহিত্য
সঠিক উত্তর: (ঘ)

১০. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন?
ক) ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে
খ) ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে
গ) ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে
ঘ) ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে
সঠিক উত্তর: (গ)

১১. রামসুন্দর প্রথমবার কত টাকা নিয়ে বেহাইর কাছে এসেছিলেন?
ক) তিন হাজার টাকা
খ) দুই হাজার টাকা
গ) পাঁচ হাজার টাকা
ঘ) চার হাজার টাকা
সঠিক উত্তর: (ক)

১২. ‘পঞ্জর’ শব্দের অর্থ কী?
ক) পুঁজি
খ) পিঞ্জর
গ) পাঁজর
ঘ) খাঁচা
সঠিক উত্তর: (গ)

১৩. ‘দেনাপাওনা’ গল্পে সময়কালে কে উপস্থিত হলো না?
ক) ঋণদাতা মহাজন
খ) কনের মাতুল
গ) বরের পিতা
ঘ) বর স্বয়ং
সঠিক উত্তর: (ক)

১৪. নিরূপমার বাবার নাম কী?
ক) রামসুন্দর
খ) রায়বাহাদুর
গ) হরমোহন
ঘ) রাধামাধব
সঠিক উত্তর: (ক)

১৫. নিরূপমার অধীর হয়ে ওঠার কারণ হলো –
i. বাপের বাড়ি যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা
ii. ব্যথিত পিতৃহৃদয়কে সান্ত্বনা দেওয়া
iii. শাশুড়ির বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হওয়া
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) i ও ii
খ) ii ও iii
গ) i ও iii
ঘ) i, ii ও iii
সঠিক উত্তর: (ক)

১৬. নিরূপমার শবদাহে এমন চন্দন কাষ্ঠের চিতা এ মুলুকে কেহ কখনও দেখে নাই। – এ ধরনের আয়োজনের পেছনে রায়বাবুদের কী উদ্দেশ্য ছিল?
ক) খ্যাতির মোহ
খ) রুচিবোধ
গ) ধর্মীয় বোধ
ঘ) উদারতা
সঠিক উত্তর: (ক)

১৭. বাঙালি হিন্দুসমাজের পটভূমিতে ‘দেনাপাওনা’ গল্পে লোভী, স্বার্থপর ও সুবিধাবাদী চরিত্রের প্রতীক –
i. নিরূপমার শ্বশুর
ii. নিরূপমার শাশুড়ি
iii. নিরূপমার স্বামী
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) i ও ii
খ) ii ও iii
গ) i ও iii
ঘ) i, ii ও iii
সঠিক উত্তর: (ক)

১৮. সামান্য কারণে হাতে দুর্গন্ধ করতে চান না কে?
ক) রামসুন্দর
খ) নবীনমাধব
গ) হরমোহন
ঘ) রায়বাহাদুর
সঠিক উত্তর: (ঘ)

১৯. নিরূপমা নামটিতে কী প্রকাশ পেয়েছে?
ক) বাঙালিত্বের ঠমক
খ) নিরূপমার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার
গ) ঠাকুর-দেবতার উক্তি
ঘ) বাপ-মায়ের আদর
সঠিক উত্তর: (ঘ)

২০. কার কাছে বাপের অপরাধের অনুতাপ গোপন করা যেত না?
ক) শাশুড়ির
খ) শ্বশুরের
গ) মেয়ের
ঘ) প্রতিবেশীর
সঠিক উত্তর: (গ)

২১. রামসুন্দর গোপন রাখলেন –
i. বাড়ি বিক্রয়ের কথা
ii. ছেলেদের গৃহহীন করার কথা
iii. নিরূপমার বাড়িতে যাওয়ার কথা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক) i ও ii
খ) ii ও iii
গ) i ও iii
ঘ) i, ii ও iii
সঠিক উত্তর: (ক)

২২. ‘থাক, বেহাই, ওতে আমার কাজ নেই’ – কিসের বিষয়ে বলেছিলেন?
ক) পূজার
খ) পীড়ার
গ) যত্নের
ঘ) টাকার
সঠিক উত্তর: (ঘ)

২৩. ‘সরোদনে’ শব্দের অর্থ কী?
ক) রোদের সাথে
খ) হেসে হেসে
গ) কেঁদে কেঁদে
ঘ) রাগের সাথে
সঠিক উত্তর: (গ)

২৪. নিরূপমার চিতায় কোন কাঠ ব্যবহার করা হয়েছিল?
ক) কাঁঠাল কাঠ
খ) চন্দন কাঠ
গ) সেগুন কাঠ
ঘ) সুন্দরী কাঠ
সঠিক উত্তর: (খ)

২৫. ‘নিত্যক্রিয়া’ শব্দ দ্বারা বোঝায় –
ক) নৃত্যের কাজ
খ) প্রতিদিনের কাজ
গ) ভোরের কাজ
ঘ) প্রত্যুষের কাজ
সঠিক উত্তর: (খ)

২৬. ‘দেনাপাওনা’ গল্পে বরপক্ষ কত টাকা পণ চেয়েছিল?
ক) পাঁচ হাজার
খ) দশ হাজার
গ) পনের হাজার
ঘ) বিশ হাজার
সঠিক উত্তর: (খ)

২৭. ভানুসিংহ কার ছদ্মনাম?
ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
খ) প্রমথ চৌধুরী
গ) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ঘ) গোলাম মোস্তফা
সঠিক উত্তর: (ক)

২৮. বিশেষত কার আক্রোশ আর কিছুতেই মেটে না?
ক) পিতার
খ) বরের
গ) শ্বশুরের
ঘ) শাশুড়ির
সঠিক উত্তর: (ঘ)

২৯. ‘বাঘের জন্য বাঘিনী ছিল’ – উক্তিটিতে কী প্রকাশ পেয়েছে?
ক) হিন্দু সমাজের স্বরূপ
খ) বহুবিবাহের ইঙ্গিত
গ) বাঙালির সংস্কার
ঘ) সামন্তবাদের ধারণা
সঠিক উত্তর: (খ)

৩০. ‘দেনাপাওনা’ গল্পে বিবাহসভায় একটা তুমুল যোগাযোগ বেধে গেল কেন?
ক) কনে মূর্ছা যাওয়ায়
খ) পণের টাকা হাতে না পাওয়ায়
গ) বর বিয়ে করতে অস্বীকার করায়
ঘ) বিয়েবাড়ির খানাপিনা ভালো না হওয়ায়
সঠিক উত্তর: (খ)

এছাড়া ও এই অধ্যায়ের আরো অনেকগুলো MCQ সাজেশন পেতে নিচের পিডিএফ ফাইল টি ডাউনলোড করে নিন

PDF File Download From Here

📝 সাইজঃ- 276 KB

📝 পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ 6

Download From Google Drive

Download

Direct Download 

Download

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here