প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার চুড়ান্ত  সিলেবাস ও মানবনন্টন | সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরির সংক্ষিপ্ত প্রস্তুতি যেভাবে নিবেন

Govt Primary School Job Exam Syllabus , Marks Distribution and Suggestions

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি- যেভাবে নিবেন প্রস্তুতিঃ

বর্তমানে দেশের শিক্ষিত বেকারদের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একটি চাকরি। কারন একটি চাকরির সাথে জড়িয়ে আছে আপনার জীবনের অনেককিছু। চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে যারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করতে চান তারা কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন আজ তা নিয়ে লিখছি।
এই পরীক্ষার মোট নম্বর ১০০, এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষার নম্বর ৮০ আর মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ২০। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আপনাকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। লিখিত পরীক্ষা নেয়া হবে এমসিকিউ পদ্ধতিতে। বিষয় গুলো হচ্ছে বাংলা, গণিত, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান। প্রতিটি বিষয় থেকে ২০টি করে মোট ৮০ টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকবে।

প্রতিটি প্রশ্নের মানঃ

১। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। অর্থাৎ চারটি উত্তর ভুল হলেই প্রাপ্ত নম্বর থেকে ১ নম্বর কাটা যাবে।
আপনাকে প্রতিটি বিষয়ের জন্যই আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। আপনি যদি ৮০ এর মধ্যে ৭০+ নম্বর পান তাহলে আপনি সেইফ থাকবেন। তাই প্রস্তুতি নিতে হবে ভালভাবে। কোন অবহেলা করা যাবেনা। কারন আপনাকে কয়েক লক্ষ প্রার্থীর সাথে প্রতিযোগিতা করতে হবে আর একটি চাকরির সাথে আপনার জীবন ও ভবিষ্যৎ জড়িত।

কি কি পড়বেন ও কিভাবে পড়বেনঃ

বাংলাঃ প্রথমেই আসি বাংলা নিয়ে। বাংলা অংশে ব্যাকরণের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড প্রণীত ব্যাকরণ বইয়ের সব অধ্যায় উদাহরণসহ ভালোভাবে পড়তে হবে। জানতে হবে কবি-সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম ও জীবনী সম্পর্কে। এসএসসি বোর্ড বইয়ের লেখক পরিচিতি বা সাহিত্যিক পরিচিতি অংশ পড়লে অনেকটা সহায়ক হবে। পিএসসি নির্ধারিত ১১ জন সাহিত্যিক সম্পর্কে পড়বেন। ব্যাকরণ থেকে ভাষা, বর্ণ, শব্দ, সন্ধি বিচ্ছেদ, কারক, বিভক্তি, উপসর্গ, অনুসর্গ, ধাতু, সমাস, বানান শুদ্ধি, পারিভাষিক শব্দ, সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, বাগধারা, এককথায় প্রকাশ থেকে প্রশ্ন আসে। সাহিত্য অংশে গল্প বা উপন্যাসের রচয়িতা, কবিতার লাইন উল্লেখ করে কবির নাম থেকে প্রশ্ন আসতে পারে।
এই সব গুলো বিষয় বিসিএস প্রিলিমিনারি ডাইজেস্ট বই থেকে বা অন্য যে কোন গাইডে গুছিয়ে দেওয়া আছে। সেখান থেকে পড়তে পারেন।

বাংলা সাহিত্যের  ১১ জন কবি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেখতে এখানে ক্লিক করুন

ইংরেজিঃ ইংরেজি গ্রামারের Right forms of verb, Tense, Preposition, Parts of Speech, Voice, Narration, Spelling, Sentence Correction- থেকে প্রশ্ন আসে। Advance Learners by Chowdhury and Hossain বা অন্য যে কোন গ্রামার বই থেকে গ্রামারের এই টপিকস গুলো উদাহরণসহ পড়ুন। মুখস্থ করতে হবে Phrase and Idioms, Synonym, Antonym।
ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদও পড়তে হবে। এজন্য ২০১৫-১৮ সালের বিভিন্ন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করতে পারেন। বিসিএস প্রিলিমিনারি ডাইজেস্ট বইয়ের ইংরেজি অংশটুকু ভালভাবে পড়তে পারেন।

আরো পড়ুনঃ-

গণিত :

এই অংশে মার্কস পাওয়া তুলনামূলক ভাবে সহজ। প্রতিদিন ২-৩ ঘণ্টা গণিত প্রাকটিস করা দরকার। পাটিগণিতের পরিমাপ ও একক, ঐকিক নিয়ম, অনুপাত, শতকরা, সুদকষা, লাভক্ষতি, ভগ্নাংশ থেকে প্রশ্ন আসে। বীজগণিতের সাধারণ সূত্রাবলী থেকে প্রশ্ন থাকে। মুখে মুখে ও সূত্র প্রয়োগ করে সংক্ষেপে ফল বের করার প্র্যাকটিস করতে হবে। যাতে প্রশ্ন দেখা মাত্রই সূত্র প্রয়োগ করে ফল বের করা যায়। জ্যামিতির জন্য ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বর্গক্ষেত্র, রম্বস, বৃত্ত ইত্যাদির সাধারণ সূত্র ও সূত্রের প্রয়োগ প্রাকটিস করবেন। মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্যবই যেমন অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির গণিত বই অনুসরণ করলে ভালো হবে।
ডাইজেস্ট থেকে গণিত অংশটুকু ভালভাবে বুঝে শেষ করবেন।

গণিতের সমাধান বের করতে অনেকে বেশি সময়নিয়ে ফেলেন। এ ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে।  পুরনো পাঠ্যক্রমের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির গণিত বই অনুসরণ করতে হবে। দেখে যেতে হবে এইচএসসি পর্যায়ের বইও। সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর নেওয়া যাবে না। সাধারণ ক্যালকুলেটর নেওয়া গেলেও সময় স্বল্পতারকারণে সব সময় ব্যবহার করতে যাওয়াটা বোকামি।গণিতের প্রস্তুতি এমনভাবে নিতে হবে যেন মুখে মুখেই অঙ্কের বেশির ভাগ সমাধান করে নেওয়া যায়, বারবার চর্চা করলেই এটা সম্ভব।

গণিতের শর্টকাট টেকনিকগুলো দেখে আসুন

সাধারণ জ্ঞানঃ

বাংলাদেশ বিষয়াবলী থেকে প্রশ্ন বেশি আসে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষা, ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ, ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু, সভ্যতা ও সংস্কৃতি, বিখ্যাত স্থান, বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থা, অর্থনীতি, বিভিন্ন সম্পদ, জাতীয় দিবস থেকে প্রশ্ন আসতে পারে।

আর আন্তর্জাতিক অংশে বিভিন্ন সংস্থা, দেশ, মুদ্রা, রাজধানী, দিবস, পুরস্কার ও সম্মাননা, খেলাধুলা থেকে প্রশ্ন থাকে।
আর সাম্প্রতিক বিষয়ের জন্য মাসিক কারেন্ট এফিয়ার্স পড়তে পারেন।

সাধারণ বিজ্ঞান থেকে বিভিন্ন রোগব্যাধি, খাদ্যগুণ, পুষ্টি, ভিটামিন থেকে প্রশ্ন আসতে পারে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার সকল প্রশ্ন সমাধান পেতে এখানে ক্লিক করুন

কম্পিউটার ও আইসিটি থেকেও প্রশ্ন থাকে। আপনি কম্পিউটার ও আইসিটির বেসিক বিষয় গুলো ভালভাবে আয়ত্ব করবেন।

বিজ্ঞান, আইসিটি ও কম্পিউটার এর জন্য ২০১৫-১৮ সালের বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন গুলো ভালভাবে পড়লে বেশ কিছু কমন পেতে পারেন।

পরের পরামর্শ গুলো শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্যই নয়। যে কোন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ২য় শ্রেণি চাকরির জন্যও প্রযোজ্য। এইভাবে পড়লে আশা করি আপনি প্রিলিতে ভাল নম্বর পাবেন। তবে আপনি চাইলে যিনি আরো ভাল জানেন বা নিজের পরামর্শ অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে পারেন। তবে যেভাবেই নেন না কেন আপনাকে পড়তে হবে পরিশ্রম করতে হবে। ৩০ বছর যে চাকরি করে আপনার জীবন চলবে সেই চাকরির জন্য অন্তত ৩০ দিন দৈনিক ১৬ ঘণ্টা করে পড়ালেখা করুন। শুধুমাত্র সরকারি জবের পেছনে না ছুটে বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি জবের জন্যও চেষ্টা করুন।

সাধারণ জ্ঞানের শর্টকাট টেকনিকগুলো দেখে আসুন

মৌখিক পরীক্ষাঃ

লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদেরই শুধু মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হবে।  মৌখিক পরীক্ষায় থাকবে ২০ নম্বর। একাডেমিক ফলাফল বা শিক্ষাগত যোগ্যতার ওপর থাকবে ৫ নম্বর। এক্সট্রা কারিকুলাম (নাচ, গান, অভিনয়, আবৃত্তি) এর ওপর বরাদ্দ থাকবে ৫ নম্বর।বাকি ১০ নম্বর থাকবে সাধারণ জ্ঞানের ওপর। মৌখিক পরীক্ষায় সাধারণ জ্ঞানের জন্যপ্রার্থীর নিজ জেলার থানা বা উপজেলার আয়তন,জনসংখ্যা, সংস্কৃতি, জেলার ইতিহাস, রাজনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা থাকলে ভালো করা যাবে।

বিগতবছরগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও অনিয়মের অভিযোগে বাতিল হয়েছিল কয়েকটি জেলার লিখিত পরীক্ষা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে মেধাবী প্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই সনাতন পদ্ধতি বাদ দিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জ্ঞানেন্দ্র নাথ বিশ্বাস জানান, ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে প্রশ্ন ব্যাংক। সেখান থেকে বাছাই করে তৈরি করা হবে ৮০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের ৯ সেট প্রশ্ন। প্রতিটি সেটে প্রশ্নের ক্রমিক নম্বর ভিন্ন হবে। পরীক্ষার দিন সকালে ই-মেইলের মাধ্যমে প্রতিটি জেলায় প্রশ্ন পাঠানো হবে। ম্যাজিস্ট্রেটেরউপস্থিতিতে এক কপি প্রশ্ন প্রিন্ট করা হবে এবং ফটোকপি করে দুপুর ২টার মধ্যে পাঠানো হবে প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে।

“সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান

পিডিএফ ডাউনলোড করুন”

“সাজেশন পরীক্ষার কোন প্রশ্ন নয় শুধু ব্যক্তির অনুমান মাত্র।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here